
রাজধানীর বাজারগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ক্রেতাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। সীমিত আয়ে বাজারের খরচ মেটাতে না পারা মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত—সবাই এখন চরম দুর্ভোগে। বরাদ্দের বাজেটে সদাইয়ের ব্যাগ ভরছে না, ফর্দে থাকছে অপূর্ণতা, আর সংসারে বাড়ছে মন কষাকষি।
গত সপ্তাহের মতো শুক্রবারও রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও ফার্মগেটের বাজার ঘুরে জিনিসপত্রের দামে উল্লম্ফন দেখা গেছে। বেশিরভাগ সবজির কেজি ৮০ টাকার নিচে নেই।
সবজির বাজারে আগুন: চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, লাউ ৮০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, উস্তা ১০০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, বড় বেগুন (বেগুনি) ২০০ টাকা, ঝিঙ্গা ১০০ টাকা, চালকুমড়া ৭০ টাকা, পেঁপে ৩০-৩৫ টাকা, পটল ৮০ টাকা, শসা ৭০-৮০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, ধুন্দল ১০০ টাকা এবং কাকরোল ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের কেজি দাঁড়িয়েছে ২০০ টাকায়। গাজর ১২০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা এবং লেবুর হালি ৩০-৩৫ টাকায় মিলছে।
এছাড়াও, মাঝারি মানের কাঁচকলা ৪০ টাকা হালি, বড় কাঁচকলা ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি এবং ওল ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যতিক্রম শুধু আলু, যার কেজি ২০-২৫ টাকার মধ্যে।
শাকের দামও চড়া। লাল শাকের আঁটি ২৫ টাকা, পুঁই শাকের আঁটি ৫০ টাকা, লাউ শাক ৫০ টাকা, কলমি শাকের আঁটি ২৫ টাকা এবং কচুর শাকের আঁটি ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিদেশি সবজির দাম আরও আকাশছোঁয়া। সবুজ ক্যাপসিকাম ৩৫০ টাকা, রঙিন ক্যাপসিকাম ৮০০ টাকা এবং বিটরুট ১৪০ টাকা কেজি। শীত আসার আগেই নতুন শিম ২৫০ টাকা কেজি এবং একটি ফুলকপি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফার্মগেটের কলমিলতা বাজারে আসা জহিরুল ইসলাম পণ্যের দাম নিয়ে এতটাই বিরক্ত যে কোনো কথা বলতেও রাজি নন। তিনি বিদ্রূপ করে বলেন, "নিশ্চয়ই এসব সবজির অনুভূতি আছে। দামে তারা খুবই খুশি। বিক্রেতারাও খুশি। তারা ৫ টাকা বাড়তি দামে কিনে খুচরা বাজারে ১০-১৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছে। কেন বাড়লো, কত বাড়লো, এটা দেখার কেউ নেই, জবাবদিহি করার কোনো জায়গা নেই।"
মাছের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী: জাতীয় মাছ ইলিশের দামেও আকাশছোঁয়া। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ২৩০০ টাকার ওপরে, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৮০০ টাকা এবং ২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৫৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য মাছের দামও কম নয়। এক কেজির বেশি ওজনের কাতল ৩৫০ টাকা, এক কেজির কম ওজনের কাতল ২৮০ টাকা, রুই ৩২০ টাকা, পাঙ্গাস ১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ১৬০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ টাকা, এক কেজির বেশি ওজনের বোয়াল ৬০০ টাকা এবং আইড় ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, পাবদা ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ টাকা (বড় চিংড়ি ১০০০-১২০০ টাকা), ছোট বাইম ৬০০-৭০০ টাকা, বড় বাইম ১২০০ টাকা, কই ২৫০ টাকা, শোল ৬০০ টাকা, মলা ৪০০ টাকা, কাঁচকি ৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৮০০ টাকা, বড় বেলে ১০০০ টাকা, ছোট বেলে ৮০০ টাকা এবং সরপুঁটি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি রূপচাঁদা ৬০০-৭০০ টাকায় মিলছে।
মুরগি ও ডিমের দাম স্থিতিশীল: ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০-১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩১০-৩২০ টাকা এবং লেয়ার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৪৮ টাকা।
চাল, ডাল ও মাংসের বাজার: খোলা চিকন চাল (মিনিকেট) ৮০-৯০ টাকা, স্বর্ণা মোটা চাল ৬০ টাকা, পাইজাম ৬৫ টাকা এবং আঠারো চাল ৬৫-৬৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডাল ১৫০ টাকা, আমদানি করা মোটা ডাল ১১০ টাকা, ছোলার ডাল ১৪০-১৫০ টাকা এবং মুগ ডাল ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭৬০-৭৮০ টাকা কেজি, ছাগলের মাংস ১১০০ টাকা কেজি এবং ছাগি ১০৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্যতেল প্রতি লিটার ১৮৯ টাকা, পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি, আমদানি রসুন ১৫০ টাকা, দেশি মাঝারি রসুন ১২০ টাকা এবং ছোট রসুন ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
Comments