Image description

ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে একীভূত হতে যাওয়া দুর্বল পাঁচটি ব্যাংকের নাম ও বাহ্যিক সাইনবোর্ড পরিবর্তনের কাজ আজ-কালের মধ্যেই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যেও গ্রাহকরা চাইলে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত দ্রুততম সময়ে ফেরত পাবেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্ম: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকতে থাকা দুর্বল পাঁচটি ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে সব ধরনের আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আজ-কালের মধ্যেই এসব ব্যাংকের নাম ও সাইনবোর্ড পরিবর্তনের কাজ শুরু হবে।”

তিনি আরও জানান, একীভূতকরণের ফলে শাখা পর্যায়েও বড় পরিবর্তন আসবে। খরচ কমাতে একই এলাকায় একীভূত হওয়া একাধিক ব্যাংকের শাখা থাকলে একটি রেখে বাকিগুলো অন্য সুবিধাজনক স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

আমানতকারীদের দুশ্চিন্তা দূর করে ড. মনসুর বলেন, “গ্রাহকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পাঁচটি ব্যাংকের জন্য ইতোমধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে। টাকা প্রয়োজন না হলে দয়া করে তা ব্যাংকেই রাখুন। কারণ সবাই যদি একযোগে সব টাকা তুলতে যান, তবে বিশ্বের কোনো শক্তিশালী ব্যাংকই তা সামলাতে পারবে না।”

তবে সম্প্রতি আর্থিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ইসলামী ব্যাংককে আপাতত একীভূত করার তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে বলে জানান গভর্নর।

ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে গভর্নর বলেন, “ব্যাংক মানে মালিকের পকেটের সম্পদ নয়। আমরা পত্রিকার প্রতিটি খবর যাচাই করছি। দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলতে ফরেনসিক অডিট করা হবে। ব্যাংকের কোনো শাখা থেকে লুটপাট হলে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত (কালেকটিভ) শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ সময় তিনি অনিয়মের তথ্য ফাঁসকারীদের (হুইসেল ব্লোয়ার) সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন প্রসঙ্গে ড. মনসুর বলেন, “মন্ত্রীর একটি ফোনে যেন গভর্নরকে সরিয়ে দেওয়া না যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের আইন প্রণয়ন করে গভর্নরকে বিশেষ সুরক্ষা দিতে হবে, যাতে তিনি নির্ভয়ে নীতি নির্ধারণ করতে পারেন। কেবল আদালতের মাধ্যমে নৈতিক স্খলন বা ঘুষের প্রমাণ মিললেই তাকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা উচিত।”

বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত হার ৩৬ শতাংশ স্বীকার করে গভর্নর বলেন, “এই বিশাল খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বন্ড মার্কেটের বিকাশ ঘটাতে হবে। বাংলাদেশেও বড় শিল্প ঋণের জন্য বন্ড মার্কেট চালুর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।”

নির্বাচনের প্রভাবে অর্থনীতি ধ্বংস হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (বিওপি) শক্তিশালী হচ্ছে। তবে দেশের আর্থিক খাতকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে অন্তত ১০ বছর সময় লাগতে পারে বলে তিনি মত দেন।