একসময় “ডিজিটাল সোনা” হিসেবে পরিচিত বিটকয়েনের দাম চলতি বছরে বিপরীত দিশায় গেছে। সোনার দাম ৭১ শতাংশ বেড়েছে, কিন্তু বিটকয়েনের দাম ৬ শতাংশ কমেছে, যা প্রমাণ করে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রকৃত সোনার দিকে ঝুঁকছেন।
বিটকয়েনের দাম গত কয়েক বছর ধরে ওঠানামা দেখলেও অক্টোবরের বাজার ধাক্কায় দাম দ্রুত কমে ১ লাখ ২৬ হাজার ডলার থেকে ৮৭ হাজার ডলারে নেমে এসেছে। ডয়চে ব্যাংকের বিশ্লেষকরা মূল কারণ হিসেবে ঝুঁকি এড়ানোর প্রবণতা, সুদের হার, নিয়ন্ত্রণগত অগ্রগতির ঘাটতি, তারল্য স্বল্পতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অর্থ প্রত্যাহারকে চিহ্নিত করেছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিটকয়েন কখনো সোনার বিকল্প হতে পারবে না। এর বাজারে অস্থিরতা বেশি এবং মৌল ভিত্তি নেই, তাই বিনিয়োগকারীরা যেকোনো সময় ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। ফলে নিরাপত্তা খুঁজতে তারা ধীরে ধীরে প্রকৃত সোনা ও রূপার দিকে ফিরছেন।
কেন এই অবস্থা
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, অক্টোবর মাসে এসে সোনা ও বিটকয়েনের গতিপথ প্রকৃত অর্থেই আলাদা হয়ে যায়, সে সময় বিটকয়েনের দ্রুত দরপতন ঘটে। ১০ অক্টোবর ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে। তবে চীনের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়া নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তুলনামূলকভাবে ছোট বাজারে বিপুল পরিমাণ বিটকয়েন বিক্রি হয়ে যায়।
মূল কথা হলো শেয়ারবাজার ও মূল্যবান ধাতুর মতো বিটকয়েন এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পুরো ক্রিপ্টো বাজারের মূল্য ছয় সপ্তাহে এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলারের বেশি কমে যায়। অক্টোবরের শুরুতে বিটকয়েনের দাম ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ডলার। সেই দাম এখন কমে হয়েছে ৮৭ হাজার ডলার।
এক মাস আগে প্রকাশিত এক গবেষণা নোটে ডয়চে ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা বিটকয়েনের দরপতনের পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেন। সেগুলো হলো অক্টোবরে বাজারজুড়ে ‘ঝুঁকি এড়ানোর’ প্রবণতা, সুদের হার নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভের কড়া বার্তা, প্রত্যাশার তুলনায় নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত অগ্রগতির ঘাটতি, তারল্যের স্বল্পতা ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অর্থ প্রত্যাহার। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়া।
ডয়চে ব্যাংকের বিশ্লেষকদের উপসংহার ছিল, এই সংশোধনের পর বিটকয়েন স্থিতিশীল হবে কি না, তা অনিশ্চিত। আগে পতন হতো খুচরা বিনিয়োগকারীদের জল্পনার কারণে। কিন্তু এবার বিষয়টি সে রকম নয়; বরং উল্লেখযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ ও নীতিগত অগ্রগতি সত্ত্বও এবং বৈশ্বিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রবণতার পটভূমিতে এবারের এ দরপতন। ফলে এ প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদি হবে বলেই শঙ্কা।
শেয়ারবাজারে বিনিয়েগাকারীদের মতো খাঁটি বিটকয়েন বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস, প্রতিটি ধাক্কাই নতুন করে কেনার সুযোগ নিয়ে আসে। তাঁদের আস্থা সাধারণত টলে যায় না। আগের বছরগুলোতে বড় পতনের পর ক্রিপ্টোকারেন্সিটি যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাতে এই বিনিয়োগকারীদের যে পুরোপুরি ভুল বলা যায়, তা–ও নয়।
তবু এ বছর যেন কোথাও একটা চিড় ধরেছে। প্রকৃত অর্থেই বিনিয়োগকারীরা যখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন, তখন তাঁরা কম্পিউটার কোডের ওপর ভরসা না করে সোনা ও রুপার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে যে প্রযুক্তি এখনো ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি, তার প্রতি আগ্রহ কমেছে। বছরের শেষদিকে এসে তাই বিটকয়েন ও অন্যান্য মুদ্রার বাজারের গভীরতা কতটা—সে প্রশ্নও উঠছে। আগের মতো উত্তেজনা আর নেই।
বিশ্লেষকেরা অবশ্য বলেন, বিটকয়েন বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে সোনার চেয়েও বেশি অস্থির। বিটকয়েনের মৌল ভিত্তি নেই। ফলে এটির বাজারে বুদ্বুদ তৈরি হলে তা খুব সহজেই ফেটে যেতে পারে। তাতে পুঁজি হারাতে পারেন অনেকে।
তাই বিশ্লেষকদের বড় একটি অংশ মনে করছেন, বিটকয়েন কখনো সোনার বিকল্প হতে পারে না।




Comments