Image description

ঈদুল ফিতরের অন্যতম বিশেষ খাবার হলো সেমাই। ঈদের খাদ্যতালিকায় সেমাই এক বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। সেমাই ছাড়া ঈদ যেন একেবারেই বর্ণহীন। তাই ঈদ এলে সেমাইয়ের কদর বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আর এই সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়া শাজাহানপুরের সেমাই পল্লির কারিগররা। 

ঈদ ঘনিয়ে আসায় সেমাই পল্লির কারখানাগুলোতে দম ফেলার সময় নেই। কেউ মেশিনের সাহায্যে ময়দা প্রক্রিয়াজাত করছেন। কেউ আবার রোদে শুকিয়ে ভেজে প্যাকেটজাত করায় ব্যস্ত। ঈদকে ঘিরে এমন চিত্র দেখা মিলছে জেলার শাজাহানপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে। 

জনশ্রুতি আছে, ১৯৪৭- এ দেশ ভাগের সময় বগুড়ায় পাকিস্তান থেকে আশা অবাঙ্গালীরা বসবাস শুরু করে। তাদের মাধ্যমেই শাজাহানপুরের বেজোড়া গ্রামে প্রথম সাদা সেমাই এর যাত্রা শুরু হয়। যা ধীরে ধীরে সেমাই পল্লি হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখন এর কাজ হচ্ছে উপজেলার অন্তর্গত বেজোড়া, শ্যামলাকাঁথি, কালসিমাটি, চাঁচাইতারা, মাদলা সহ প্রায় আট গ্রামে। 

সেমাই তৈরির এ কর্মযজ্ঞ শুরু হয় সেহরির পর থেকেই, যা একটানা চলে বিকাল পর্যন্ত। চিকন সেমাই তৈরির মূল উপকরণ ময়দা। ময়দার গোলা মেশিনে ঢুকিয়ে দিলেই বের হয় সাদা চিকন সেমাই। সেগুলোকে কাগজের ওপর বিছিয়ে শুকানো হয় রোদে। শুকানোর পর ভাঁজে ভাঁজে সাজিয়ে রাখা হয় বাঁশের খাঁচায়। শবে বরাতের পর থেকে শুরু হওয়া এই কর্মযজ্ঞ চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত।

আগে সারা বছর এর কাজ হলেও এখন তা তৈরি হচ্ছে ঈদকে ঘিরে। শ্রমসাধ্য ও শ্রমিক সংকটতায় দিন দিন পেশাটি হারিয়ে যাচ্ছে বিলুপ্তির পথে। 

এ সম্পর্কে বেজোড়া গ্রামের কারিগর আব্দুর রশিদ বলেন, আমি প্রায় ৩৭ বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িত। আগের মতো এখন আর লাভ হয় না। শুধু এক মাসের জন্য শ্রমিক পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তাদের পারিশ্রমিক বেশি দিতে হয়। এ ছাড়াও ময়দার দাম বেশি। একবস্তা ময়দা দিয়ে উৎপাদিত সেমাই বাজারে কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। এজন্য ধীরে ধীরে কারিগর কমে যাচ্ছে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি আরো সম্প্রসারণ করা যাবে বলেন জানান এই কারিগর।

বগুড়ার সাদা সেমাইয়ের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। দইয়ের মতো সাদা সেমাইও জেলার পরিচিতি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। এখানকার তৈরি সাদা চিকন সেমাই স্বাদে মানে অনন্য। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।