Image description

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লন্ডনের এনফিল্ড কাউন্সিলের মেয়র মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম ৪১ জন বন্ধু ও পরিবারের সদস্যের জন্য যুক্তরাজ্যের ভিসা সুপারিশ করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন। এ ঘটনায় তিনি লেবার পার্টি থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত হয়েছেন এবং অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্রিটিশ হোম অফিসের তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ–এর অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সুপারিশপত্রে কী ছিল?

দ্য টেলিগ্রাফ–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেয়র আমিরুল ইসলাম এনফিল্ড কাউন্সিলের অফিশিয়াল ক্রেস্ট ও লোগো ব্যবহার করে ঢাকায় অবস্থিত ব্রিটিশ হাইকমিশনে একাধিক ‘অফিশিয়াল’ চিঠি পাঠান। এসব চিঠিতে তিনি অনুরোধ করেন, তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ এবং পরিবারের সদস্যদের ভিসা আবেদন ‘সহজ’ করা হোক, যাতে তারা উত্তর লন্ডনের এনফিল্ডে তাঁর অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন। চিঠিগুলোতে পাসপোর্ট নম্বর এবং জন্মতারিখসহ বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ ছিল, যাতে ভিসা আবেদনগুলো ‘দ্রুত’ প্রক্রিয়া করা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এই ব্যক্তিরা তাঁর এনফিল্ডের বাসভবনে থাকবেন এবং তাঁদের যুক্তরাজ্য সফরের সমস্ত খরচ তিনি বহন করবেন। তবে তদন্তে দেখা গেছে, আমিরুল ইসলাম মেয়র হওয়ার এক বছর আগে থেকেই এমন চিঠি পাঠিয়েছিলেন, এমনকি তিনি মেয়র হবেন জানার আগেও কিছু চিঠি পাঠানো হয়েছিল।

তদন্তে যা উঠে এসেছে

১৬০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে যে, আমিরুল ইসলাম তাঁর পদমর্যাদার অপব্যবহার করে পরিবার, বন্ধু এবং সহযোগীদের ভিসা পেতে সহায়তা করেছেন। তিনি মোট ১৩টি চিঠি পাঠিয়েছিলেন এবং আরও ৬টি চিঠি তৈরি ও পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন। বাকি ১১টি চিঠির উৎস নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তদন্তকারীরা নিশ্চিত, সেগুলোও তিনিই পাঠিয়েছিলেন।

তদন্তে আরও দেখা গেছে, কাউন্সিলের কর্মীরা এ ধরনের চিঠি তৈরি করতে বিব্রতবোধ করলে আমিরুল নিজেই কিছু চিঠি তৈরি করেন। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর আগে অন্য মেয়ররাও এ ধরনের সুপারিশ করেছেন। তবে তদন্তকারীরা বলছেন, আমিরুল ‘সীমা অতিক্রম’ করেছেন এবং তাঁর চিঠির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ কিছু চিঠি তাঁর অভিষেকের প্রায় এক বছর আগে পাঠানো হয়েছিল।

২০২৪ সালের মে মাসে ব্রিটিশ হোম অফিস ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে জানতে পারে যে, আমিরুল ইসলাম তাঁর ডেপুটি মেয়রের পদ ব্যবহার করে ভিসা সুপারিশপত্র পাঠিয়েছেন। এরপরই তদন্ত শুরু হয়।

আমিরুলের বক্তব্য

৪৭ বছর বয়সী আমিরুল ইসলাম দ্য টেলিগ্রাফ–কে বলেন, তিনি কোনো ভুল করেননি। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের একটি এজেন্সি তাঁর স্বাক্ষর জাল করে কিছু চিঠি অদলবদল করেছে। তিনি জানান, ২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যে আসার পর মেয়র নির্বাচিত হলে তাঁর পরিবার বাংলাদেশ থেকে অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগ্রহী ছিল। এ কারণে তিনি ভিসার জন্য সুপারিশ করেছিলেন।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

কনজারভেটিভ দলের নেতা জর্জিয়াও আলেসান্দ্রো বলেন, এনফিল্ড লেবার কাউন্সিল এই অভিযোগ সম্পর্কে অনেক আগেই জানত, তবু আমিরুলকে মেয়র হতে দেওয়া হয়েছে। তিনি এটিকে কাউন্সিলের জন্য ‘লজ্জার বিষয়’ আখ্যা দিয়ে আমিরুলের পদত্যাগ দাবি করেন।

এদিকে, গত ২৫ জুন লেবার পার্টি আমিরুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। বর্তমানে তিনি স্বাধীন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এনফিল্ড কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র জানান, আমিরুলকে তাঁর ‘পদমর্যাদার সম্মান নষ্ট করার’ জন্য নিন্দা করা হয়েছে। তাঁকে আর কোনো ভিসা সুপারিশ না করা, কাউন্সিলরের আচরণবিধি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এবং আগের মেয়রের ব্যাজ না পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেন, চলমান তদন্ত নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়। তবে অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের সব অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে। হোম অফিসের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনা যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি এবং স্থানীয় প্রশাসনের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। আমিরুল ইসলামের এই কাণ্ড কেবল তাঁর রাজনৈতিক জীবন নয়, এনফিল্ড কাউন্সিলের সুনামের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। তদন্তের চূড়ান্ত ফলাফল এই বিতর্কের পরিণতি নির্ধারণ করবে।