সালথায় সাংবাদিককে ‘ধইর্যা মাইর্যা ফেলবো’ বলে শ্রমিক-যুবদল নেতার হুমকি

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় সাংবাদিক শফিকুল ইসলামকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় শ্রমিক দলের সভাপতি কালাম বিশ্বাস ও যুবদলের নেতা দাবিদার বালাম দাইয়ের বিরুদ্ধে। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সালথা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। শফিকুল ইসলাম সালথা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। এ ঘটনায় তিনি রাতে সালথা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সালথা বাজারের বটতলায় শফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়েছিলেন আনোয়ার মোল্লার ছেলে লিয়াকত মোল্লা (৩৩)। পরবর্তীতে মালিকপক্ষ দোকানটি নিজেদের ব্যবসার জন্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন এবং লিয়াকতকে তিন মাসের নোটিশ দিয়ে দোকান ছাড়তে বলেন। লিয়াকত দোকান ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে বিষয়টি নিয়ে শনিবার সালথা বাজার কমিটির সেক্রেটারির কার্যালয়ে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
শালিস চলাকালীন কালাম বিশ্বাস (৪০), বালাম দাই (৩০), দেলোয়ার মাতুব্বর (৪০), সোহরাপ (৩০) সহ কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি এসে শফিকুল ইসলামকে হুমকি দেন। অভিযোগে বলা হয়, বালাম দাই বলেন, “কোন সাংবাদিক গুনার টাইম নাই, আমরা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে বেড়াই। লিয়াকত মোল্লা তোদের দোকান ছাড়বে না, তুই যা পারিস তাই করে দেখা।” এছাড়া কালাম বিশ্বাস বলেন, “তোর মুখ খ্যাতলাইয়্যা দিবো।” তারা শফিকুলকে পাড়িয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
এ সময় শফিকুলের বড় ভাই, দৈনিক নয়াদিগন্তের সালথা উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ রেজাউল করিম (৩৫) এগিয়ে এলে তাকেও মারধরের চেষ্টা করা হয়। সালথা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম সহ অন্যরা এগিয়ে আসলে অভিযুক্তরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান।
কালাম বিশ্বাস পূর্বে সালথা উপজেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন এবং বর্তমানে শ্রমিক দলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অপরদিকে, বালাম দাই নিজেকে যুবদল নেতা দাবি করেন। তিনি থানার দালালি ও শালিস বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার নামে চুরি, চাঁদাবাজি, সরকারি সম্পত্তি ভাংচুরসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার বাবা ইউনুস বিশ্বাস একজন গ্রাম পুলিশ।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে শুনেছেন। তবে দুর্গাপূজার ডিউটির কারণে বাইরে থাকায় বিস্তারিত বলতে পারেননি। তিনি বলেন, “থানায় গিয়ে বিষয়টি দেখবো।”
সালথা প্রেসক্লাবের সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর এ ধরনের বর্বরোচিত হামলার চেষ্টা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি। আমরা শফিকুল ইসলাম ও তার ভাইকে প্রাণনাশের হুমকির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি করছি।”
এ ঘটনা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হুমকির ঘটনা দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠেছে।
Comments