Image description

ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌর এলাকার সড়কগুলো। সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। দেখলে মনে হয় চাষ করা জমি। সামান্য বৃষ্টিতে গর্ত ঢেকে যায় পানিতে। ফলে ইজিবাইক, রিকশা ও ভ্যান উল্টে যায়। নিত্যদিন ঘটছে দুর্ঘটনা।

পৌরবাসী চলাচলের সুবিধার্থে মাঝে মাঝে নিজেরাই সংস্কার করেছে সড়ক, কোথাও লাল ঝান্ডা টাঙ্গিয়ে সতর্ক সংকেত দিয়েছে। এতে যানবাহনের ক্ষতি হয়। সহজে কেউ ভাড়া নিয়ে যেতে চায়না সড়কে। দুর্ভোগে ও কষ্টে পৌরবাসীর সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ নেই পৌরসভার।

বুধবার (০৩ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৈয়দপুর তামান্না মোড় থেকে ওয়াপদা পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়ক ও শহরের প্রধান সড়ক শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক হয়ে রেলওয়ে কারখানা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক ও সৈয়দপুর প্লাজার পিছনে আজিজার রহমান স্ট্রীট সড়কটি একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কগুলোতে পিচ ও পাথর উঠে হাড্ডিসার হয়ে পড়েছে। শহরের গোলাহাট রেলওয়ে কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের প্রধান সড়কে বড় বড় গর্ত হয়ে যেনো বড় পুকুরে রুপান্তরিত হয়েছে। ভাঙ্গাচোরা সড়কে চলাচল করতে গিয়ে যানবাহনের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। লোকজন পায়ে হেঁটেও চলাচল দুরুহ হয়ে পড়েছে। প্রতিবছর পৌরসভার বাজেট অনুষ্ঠানে সড়ক ও ড্রেন নির্মাণে বাজেট বরাদ্দ রাখলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

ওই সড়কসহ পৌরসভার অন্যান্য সড়ক মেরামত ও সংস্কার এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেন নির্মাণের জন্য পৌরবাসী সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। এরমধ্যে এলাকার লোকজন ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণ করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছে। সেই সাথে অযোগ্য মেয়রের অপসারণ দাবি করা হয়েছে। ফেসবুকে লেখনির মাধ্যমে নানা সুর ও ব্যাঞ্জনায় পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে লেখালেখি অব্যাহত রয়েছে। কেউ লিখেছেন সৈয়দপুরের পৌরসভার সড়ক ‘কোন শহরের রাস্তা গো, লাগে উরাধুরা’ ইত্যাদি।

ভোগান্তির শিকার গোলাহাট এলাকার ইকবাল, সামিউল, সেরু, হামিদা, বাশিরাসহ সকল এলাকাবাসী বলেন, সৈয়দপুরের ইতিহাসে এরুপ ভয়াবহ অবস্থা রাস্তাগুলোর আগে হয়নি। আমাদের এই এলাকার প্রতি ১০ জনের মধ্যে এখন ২ জন কোমরের হাড় সমস্যায় ভুগছেন এই রাস্তার কারনে। কত আন্দোলন, প্রতিবাদ করেও মেয়রের টনক নড়ে না। কবে নাগাদ নির্মাণ হবে তাও জানি না আমরা। এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া উপায় নাই।

সূত্র জানায়, পৌরসভার কাজে লেজেগোবরে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভার মেয়রের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে পৌরসভার ২০ কাউন্সিলর এর মধ্যে ১৫ জন অবস্থান নিয়েছিলেন। করেছেন প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলন। ফলে প্রতিটি কাজে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। উন্নয়ন কাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কাউন্সিলর জানান, সড়কগুলো বছরের পর বছর নির্মাণ না করায় তাঁরা মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারছেন না। অথচ প্রতি বছর দেড়শো কোটি টাকার উপরে বাজেট পেশ করা হয় কিন্তু সড়ক নির্মাণ করা হয় না।

প্রথম শ্রেণির সৈয়দপুর পৌরসভাটি টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ করে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সুপরিকল্পিত উন্নত ড্রেনেজ, পয়ঃনিষ্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাসহ নানামুখী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও বাস্তবে মিলছে না তার অস্তিত্ব। বেহাল সড়ক, বর্জ্য অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত পৌরসভাটি। শহরের থানার পাশে, কলাহাটি, স্মৃতি অম্লান চত্বরের সামনে, হাতিখানা সড়ক, পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে ময়লা স্তুপের ভাগাড়। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও সড়ক থেকে সরেনা ময়লা-আবর্জনা এমন অভিযোগ পৌরবাসীর। বৃষ্টি হলেই বাস-বাড়িতে ঢুকছে পানি। জলাবদ্ধতায় পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহানের সাথে কয়েকদফা যোগাযোগ করা হলেও সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। তবে প্যানেল মেয়র-১ শাহিন হোসেন বলেন, রাস্তা ও ড্রেন মেরামত ও সংস্কারে বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আশাকরি, এবছই কাজ শুরু হলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস