Image description

পিকেএসএফ দিবস পালন। | গ্রাফিক্স

বাংলাদেশ উন্নয়নে এগিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। সমাজে বৈষম্য, বিশেষ করে আঞ্চলিক বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই বৈষম্য দূর করার জন্যই আমাদের কাজ। রোববার পিকেএসএফ দিবস উপলক্ষে ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার এনডিসি এ মন্তব্য করেন।

সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘আবাসন ও নাগরিক সুবিধা খাতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাজেট বরাদ্দে দেশের ছয়টি জেলাকে শতকরা প্রায় ৭৪ ভাগ এবং বাকি ৫৮টি জেলাকে মাত্র ২৬ ভাগ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে কম বরাদ্দ পাওয়া জেলাগুলোর মধ্যে ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও বরগুনা ০.২০ ভাগ করে অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে।’

‘সাম্যের সঙ্গে উন্নয়নের পথে’ স্লোগান ধারণ করে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, প্রতিটি মানুষের মানব মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা পিকেএসএফের মূল লক্ষ্য। পিকেএসএফের উন্নয়ন ধারণার মূলে রয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও সমতাভিত্তিক উন্নয়ন। “প্রবৃদ্ধি নয়, আমরা মানব সক্ষমতা উন্নয়নে কাজ করছি।”

স্বাগত বক্তব্যে ড. নমিতা হালদার বলেন, ‘কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে তিন দশক আগে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় পিকেএসএফ। দেশের এই শীর্ষ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানটি আজ প্রায় এক কোটি ৭৬ লাখ সদস্যের একটি পরিবার।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু অর্থায়ন নয়, বরং উদ্যোগ উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, ঝুঁকি নিরসন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সুপেয় পানি, কৃষি এবং জলবায়ুর অভিঘাত সব কিছু মাথায় নিয়েই বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে পিকেএসএফ।

পিকেএসএফের বিস্তৃত বৈচিত্র্যময় কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে ১.৭৬ কোটির অধিক পরিবার অর্থাৎ দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী। এসব অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচিতে নারীর অংশগ্রহণ ৯০ ভাগেরও অধিক।’ ধারণকৃত বার্তায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. গওহর রিজভী বলেন, ‘ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। টেকসই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘পিকেএসএফের অধিকাংশ কর্মকাণ্ড বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারও পিকেএসএফকে বিশেষ প্রাধান্য দিচ্ছে।’

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান বলেন, ‘বর্তমানে পিকেএসএফের কার্যক্রমে যে বৈচিত্র্য এসেছে তা এমনভাবে সমন্বিত করতে হবে যাতে এগুলো টেকসই হয়।’ পিকেএসএফের বহুমুখী কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানব জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে পিকেএসএফ কাজ করে না।’

১৯৮৯ সালের ১৩ নভেম্বর পিকেএসএফ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্যে বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠান জন্ম লাভ করে। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় পিকেএসএফের এই সুদীর্ঘ অভিযাত্রাকে স্মরণ করার জন্য এ বছরই প্রথমবারের মতো ‘পিকেএসএফ দিবস’ পালিত হলো।

অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের সাবেক চেয়ারম্যান এম সাইদুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এবং সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউর রহমান, ড. মো. আবদুল করিম ও মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। পিকেএসএফের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সারা দেশ থেকে আগত সহযোগী সংস্থার নির্বাহী পরিচালকরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।