বরিশাল বিমানবন্দরে আবহাওয়া সংকেত সরবরাহ করা হয় আবহাওয়া অফিস থেকে। বিমানবন্দরের নিজস্ব আবহাওয়া ইউনিট না থাকায় প্রতিদিন বরিশাল-ঢাকা রুটের আকাশপথের উড়োজাহাজগুলো চলাচল করছে অনুমানের ওপর ভর করে। এতে প্রতিদিন ঢাকা-বরিশাল উভয় প্রান্ত থেকে ইউএস বাংলা এবং সপ্তাহে ৩দিন বিমান বাংলাদেশের উড়োজাহাজ চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরবর্তী বরিশাল আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য দূরত্বের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে বলে জানিয়েছে খোদ বরিশাল আবহাওয়া অফিস।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ হাওলাদার বলেন, সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বরিশাল বিমানবন্দর তাদের কাছ থেকে বাতাসের গতি, দৃষ্টিসীমা, বাতাসের দিক, বাতাসের চাপ ও মেঘের প্রকৃতির বিষয়ে তথ্য চেয়ে থাকে। কিন্তু উড়োজাহাজ ওঠানামার ক্ষেত্রে ওই মুহূর্তের আবহাওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বরিশাল আবহাওয়া অফিস থেকে গ্যাস বেলুন উড়িয়ে শক্তিশালী লেন্সের মাধ্যমে বেলুনের গতি ধারণ করে বাতাসের প্রবাহ নির্ণয় করা হয়। আবহাওয়া প্রতি মুহূর্তেই পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই আবহাওয়া অফিসের সংগৃহীত তথ্য আর দূরবর্তী এলাকার বিমানবন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য এক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। উড়োজাহাজ ওঠানামার জন্য আবহাওয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে বিমানবন্দরেই আবহাওয়া স্টেশনের প্রয়োজন বলে মনে করেন আবহাওয়া অফিসের একাধিক কর্মকর্তা।
বরিশাল বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে সিভিল অ্যাভিয়েশনের ঢাকা অফিসে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দেন। এ বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানায়, বরিশাল আবহাওয়া অফিস থেকে পাওয়া আবহাওয়া তথ্য ও দায়িত্বরতদের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমানে তীব্র শীতে ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতিতে বাতাসের গতি এবং দিক, আলোর পরিমাণ, বায়ুর উপরিভাগের চাপসহ গুরুত্বপূর্ণ বার্তাগুলো দিতে হচ্ছে অনুমাননির্ভর।
তবে বরিশাল বিমানবন্দর ও আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, উভয় দফতর বিমানবন্দরে আবহাওয়া ইউনিট স্থাপনের বিষয়ে চিঠি আদান প্রদান করছে। বরিশাল-ঢাকা রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারী ব্যবসায়ী এস এম জাকির হোসেন জানান, আবহাওয়া ইউনিট না থাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় উড়োজাহাজ ওঠা-নামায় ঝুঁকি রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে নির্মিত তৃতীয় পায়রা সমুদ্রবন্দর ও ব্যাপক উন্নয়নের ফলে নতুন নতুন উদ্যোক্তারা আসছেন। এতে করে বরিশাল বিমানবন্দরে যাত্রীর চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি রাত্রিকালীন সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া ইউনিট না থাকায় দিনের বেলাতেই যেখানে ঝুঁকি থাকছে, সেখানে রাতে কি পরিমাণ ঝুঁকি তা আর না বললেও চলে।
ঢাকা-বরিশাল রুটে যাতায়াতকারী বেশ কয়েকজন যাত্রী জানিয়েছেন, শীতকালীন সকাল-সন্ধ্যা ফ্লাইট চলাকালে কুয়াশাসহ বৈরী আবহাওয়ায় বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
আকাশপথে বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস বাংলা উড়োজাহাজের টিকেট বিক্রি করা ট্রাভেলস এজেন্সির কর্মকর্তারা জানান, বৈরী আবহাওয়ায় প্রায়ই ফ্লাইট বিপর্যয় হয় বলে যাত্রীরা তাদের জানিয়ে থাকে। তারাও বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন। তবে আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট বিষয়টি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে ১৬০ একর জমির ওপর দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এই বিমানবন্দরটি নির্মিত হয় বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নে। নির্মাণের ১০ বছর পর ১৯৯৫ সালের ১৭ জুলাই এরোবেঙ্গল এয়ারলাইন্সের বিমান সর্বপ্রথম ডানা মেলে বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়েতে। নির্মাণের পর থেকে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এ বিমানবন্দরে যাত্রীর চাপ থাকলেও নানা টালবাহানায় একাধিকবার অচল করে রাখা হয় বন্দরটি। দীর্ঘ জটিলতা কাটিয়ে সর্বশেষ ২০১৫ সালে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে পুনরায় সচল হয় এ বিমানবন্দর।
২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ বিমান ও ১০ জুলাই বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা উদ্বোধনের পর থেকে যাত্রী পরিবহন করে আসছে। বেসরকারি অপর বিমান নভোএয়ার ২০১৬ সালের জুলাই মাসে উদ্বোধনের পর একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর সার্ভিস গুটিয়ে নিলেও ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নিয়মিত সার্ভিসে আসে। বর্তমানে সপ্তাহে ৫ দিন বিমান বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রতিদিন বেসরকারি ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার কোম্পানি একটি করে উড়োজাহাজ যাত্রী পরিবহন করছে।
Comments