বাসে পাশের সিটে এক মেয়ে এসে বসল। শরীরের ভেতর ইন্দ্রিয়গুলো জেগে উঠলো। বিদ্যুতিক শক লাগার মতো শরীর নড়ে উঠলো। এক নজর জানালার দিকে বাইরে তাকানোর ভান করে দেখে নিলাম মেয়েটিকে। তারপর চোখ বুঝে ঘুমকাতর হয়ে গেলাম। আসলে এই অভ্যাসটি আমার পুরনো। কেন জানি ইচ্ছে করে, তার শরীরটা স্পর্শ করতে ঝুঁকে যেতে থাকলাম। সে তেমন কিছু না বলাতে, আমার সাহসটা আরও বেড়ে যায়।
আমার মনের ভেতর হিংস্র পশুটা কাঁচা মাংসের ঘ্রাণে মরিয়া হয়ে যায়। আমি ইচ্ছেকৃতভাবে তার শরীরের দিকে মাথা হেলিয়ে দেই। এক পর্যায়ে মেয়েটি বলল, ‘এক্সকিউজ মি। নিজেকে কন্ট্রোল করুন প্লিজ।’
আমি ওহ সরি বলে মুখে হাই তুললাম। তারপর ইনিয়ে-বিনিয়ে আমি অনিচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করেছি, সেটা মেয়েটিকে বোঝনোর চেষ্টা করি। নিজে শুদ্ধ মানুষ হিসেবে বোঝাতে থাকি প্রবন্ধকারের মতো।
ব্যাপারটির জন্য এমনভাবে অনুতপ্তের অভিনয় করতে থাকি, মেয়েটি বারবার বলতে থাকে, ‘ইটস ওকে ভাইয়া। ইঁস ওকে।’
এর মাঝে আমার বউ সবিতার ফোন। রিসিভ করেই বলি ‘বাসের ভেতর পরে কথা হবে’। আবারও ঘুমের ভান ধরে মেয়েটির শরীরের দিকে ঝুঁকে যেতেই উঠে অন্য সিটে চলে যায়। আসলে মানুষ হিসেবে আমি কেমন তা বলতে চাই না। নিজের সম্পর্কে নিজে বলতে নেই। কিন্তু আমিতো এমন ছিলাম না, কেন এমন হয়ে গেলাম। একটু নারীদের শরীর ছুঁতে পারাটা আমার কাছে অন্যরকম প্রশান্তিময় কাজ করে।
সবিতা, সে অত্যাধিক রূপসী একজন নারী। ডাগর ডাগর চোখ, দীর্ঘ কালো কেশ। সৌন্দর্যের দেবী আফ্রিদিতিকে দেখিনি, কিন্তু সবিতাকে দেখেছি। বিশ্বসেরা যৌন আবেদনময়ী নারী মেরিলিন মনরোকে ছুঁয়ে দেখিনি, আমি সবিতাকে ছুঁয়ে দেখেছি। তার কাছে আমি একজন ভদ্র, নম্র, সরল মানব। জগতে আমার মতো অতি সরল মানব কেউ নেই। আমি নাকি এক নারীতে আসক্ত পুরুষ। আমাকে নিয়ে ভীষণ গর্ব করে।
ফেসবুকে কত রকমের স্ট্যাটাস দেয় আমাকে নিয়ে। বান্ধবীদের কাছে কত ধরনের গল্প বলে আমাকে নিয়ে। এক নারীতে আসক্ত নিয়ে কতজনের কাছে বয়ান দেয়। একদিনের স্ট্যাটাস দেখে, মনে মনে লজ্জিত হয়েছিলাম। স্ট্যাটাসটি ছিল জন্মদিনের। সেখানে লিখেছিল, ‘শখের পুরুষ যখন নিজের মতো হয়, একজীবন আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার থাকে না। এক নারীতে আসক্ত পুরুষ পাওয়াটা, একজন নারীর জন্য পরম সৌভাগ্যের। যা আমি পেয়েছি। শুভ জন্মদিন হে প্রিয়তম।’
সে আমাকে একদিন বলছে, ‘সৌরভ, তুমি এতো বেশি সরল কেন।’
আমি কোনো উত্তর দেইনি। খিল খিল করে হেসেছিলাম। আসলে কি উত্তর দেব। তা জানা নেই। সে কি জানে আমি কতোটা জটিল মনের, নিকৃষ্ট হূদয়ের মানুষ। মানুষের আসলে বাহ্যিক রূপ দেখে সব বিবেচনা করা যায় না। আমার চেহেরা দেখতে কিউট, তাই বলে আমার মন কেন কিউট হব।
আমি মাঝেমধ্যে নিজেই অবাক হই, নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ করি। আমি এমন কেন! নিউ মার্কেটে বিকালে একটু ভিড় বেশি। আমি নিয়মিত বিকালে সেখানে যাই। তারপর ভিড়ের মাঝে নারীদের স্পর্শকাতর স্থানে ছুঁতে মরিয়া হয়ে যাই। ইচ্ছেকৃতভাবে কোনো নারীর গ্রিবা ছুঁয়ে যাই। শরীরের গোপন অনেক কিছু ছুঁয়ে যাই।
শুক্রবার আমার ভীষণ প্রিয়। সবিতাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে বাসাতে রেখে চলে যাই নিউমার্কেটে। সেদিন কি যে আনন্দ লাগার দিন। কিন্তু মঙ্গলবার আমার ভালো লাগে না। নিউমার্কেট এলাকাতে সেদিন বন্ধ থাকে। সেদিন আমি অসুস্থ রোগীর মতো হয়ে যাই। কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না, খেতে ভালো লাগে না। শুধু ভালো লাগে সেখানে যেতে।
একবার আমি ভীষণ অসুস্থ হয়ে যাই। শুক্রবার ছিল সেদিন। সবিতা গ্রামের বাড়িতে গেছে। তারপরও আমি শরীর উঠে সেখানে যাই। সুস্থ হয়ে যাই। আসলে আমারতো অন্য কোনো অসুখ নয়, আমার অসুখ মানসিক। এভাবে আমার মনের আড়ালে থাকা হিংস্র পশুর দিন দিন সাহস বেড়ে যায়। এত রূপসী বউ, সুন্দরী বান্ধবী তাদের সামনে আমি ফেরেশতা।
আসলে মানুষ একেক জন একেক রকম। আমি সবার চোখে সরল হলেও, নিজে জটিল সেটা নিজের ভেতর রেখে দেই। মন্দিরে যখন পূজা হতো, আমি সেখানে চলে যেতাম। ঢাকের তালে তালে নাচে মশগুল থাকতাম। আর নারীদের নাচের ভেতর প্রবেশ করতাম। সেখানে কি আনন্দ পেতাম।
আবার যখন বাণিজ্যমেলা হতো, তখন প্রতি শুক্রবার নিউমার্কেটে না গিয়ে সেখানে যেতাম। গেটে প্রবেশ করতে কি যে আনন্দ পেতাম, তা বলে বুঝাতে পারবো না। শুধু নারীদের ভিড় কোন দিকে, সেদিকে ছুটে যেতাম।
বৈশাখ মাসে মেলা, ১৪ ফেব্রুয়ারিতে নারীদের ভিড়ে মিশে যেতাম। এটা অন্যরকম ভালো লাগা অনুভব হতো। যার ব্যাখা নেই।
একদিন আমি আর সবিতা বাসে উঠেছি। কোথাও সিট নেই। ড্রাইভারের পাশে সে গিয়ে বসে। আমি বাসে দাঁড়িয়ে থাকি। এক সময় এক মেয়ের পাশে সিট ফাঁকা হয়। আমি সবিতাকে আসতে বলি। সে আমাকে সেখানেই বসতে বলে। তারপর আমি মেয়েটির পাশে গিয়ে বসে পড়ি। কড়া পারফিউম নিয়েছে শরীরে। দেখতে বেশ সুন্দরী।
আমি ভুলে গেছি সবিতা আমার সাথে এসেছে। সেই আগের মতো ঘুমের ভান ধরে তার শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করছি। মেয়েটি আমাকে সতর্ক করছে বারবার। আমি যেন নিজেকে সচেতন করি। আমি সেসবে তোয়াক্কা করছি না। আমি মনে মনে ভেবেছি, তার ভালো না লাগলে সিট ছেড়ে চলে যাবে। আমার ডান পাশে পা দিয়ে মেয়েটির শরীরে স্পর্শ করছি। ঘষাঘষিতে নিজের স্বস্তি খুঁজছি।
মেয়েটি দেখি কিছু বলছে না। এবার আনন্দটা বেড়ে যায়। হঠাৎ করে রকস্টারের মতো চিৎকার দিয়ে আমার গালে কষে কয়েকটা থাপ্পড় মারে। জোরে জোরে বলতে থাকে, ‘শুয়োরের বাচ্চা। কোনো মা বোন নেই। বারবার সচেতন করছি। আবার ইচ্ছাকৃতভাবে আমার শরীর স্পর্শ করিস।’
কথা শুনে সবিতা চলে আসে। মেয়েটির সাথে তুমুল ঝগড়া করতে থাকে। বাসের ভেতর বেশিরভাগ মানুষ আমার পক্ষ নেয়। আসলে তারাও যেন আমার মতো বোধহীন।
আমি মেয়েটির কাছে ক্ষমা চেয়ে বাস থেকে নেমে যাই। তারপর আমার ভেতরে কেমন যেন এক ধরনের স্মৃতি শক্তি ফিরে পাওয়ার মতো হয়। নিজের বোধের পরিবর্তন আসে।
মানবকণ্ঠ/এফআই
Comments