ফলাফল জালিয়াতি করে বেরোবির শিক্ষক, শিক্ষা বোর্ডেও মিললো প্রমাণ

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইউসুফের বিরুদ্ধে ফলাফল জালিয়াতি করে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের তথ্যে তার উচ্চ মাধ্যমিক ফলাফল জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে, যা নিয়োগের শর্ত পূরণ করে না।
মো. ইউসুফ, যিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বঙ্গবন্ধু পরিষদ, রংপুর জেলার সহ-সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী সংগঠন নীল দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর আমলে নিয়োগ পান। তবে তার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটি মো. ইউসুফের সনদ যাচাই করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড জানায়, ইউসুফের জমা দেওয়া এইচএসসি ফলাফল (জিপিএ ৩.০১) তাদের রেকর্ডের সঙ্গে মিল নেই। বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, তার প্রকৃত ফলাফল জিপিএ ২.৯০, যা তিনি বাড়িয়ে দেখিয়েছেন। এমনকি জালিয়াতি করা ফলাফলেও তিনি নিয়োগের শর্ত (এসএসসি বা এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ ৪.০) পূরণ করেননি। তার এসএসসি ফলাফল জিপিএ ৩.৫০।
২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বেরোবি একটি শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যেখানে ইতিহাস বিভাগে একটি স্থায়ী প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদের জন্য আবেদনের শর্ত হিসেবে এসএসসি বা এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ ৪.০ উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই শর্ত পূরণ না করেই মো. ইউসুফ নিয়োগ পান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মো. ইউসুফের নিয়োগে কোনো প্লানিং কমিটি গঠন করা হয়নি। সিন্ডিকেট তার নিয়োগ বাতিল করলেও তৎকালীন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি চ্যান্সেলরকে জানায়নি, যা আইনের লঙ্ঘন। এরপর ইউসুফ হাইকোর্টে রিট করে রায়ের মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন, এবং কর্তৃপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিল করেনি।
কাগজপত্রে দেখা যায়, একটি স্থায়ী প্রভাষক পদের বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে তিনজনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়, যদিও অনুমোদিত পদ ছিল মাত্র একটি। নিয়োগের লিখিত ডকুমেন্টে ‘একটি’ শব্দটি কেটে হাতে ‘তিন’ লেখা হয়। মো. ইউসুফকে বাছাই বোর্ড তিনজনের মধ্যে প্রথম হিসেবে সুপারিশ করে, তবে তার নামের আগে ক্রমিক নং ২ উল্লেখ করা হয়।
জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, “ইউসুফসহ তিন শিক্ষকের নিয়োগ জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে বাকি দুজনের তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা পড়েনি। এছাড়া ইউসুফ বিশ্ববিদ্যালয়কে উকিল নোটিশ পাঠিয়ে তার বিষয়টি ৯০ দিন স্থগিত রাখার কথা বলেছেন।”
এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
Comments