
সৌদি আরব ও পাকিস্তান বুধবার একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় যে কোনো এক দেশের বিরুদ্ধে হামলাকে উভয় দেশের বিরুদ্ধে হামলা হিসেবে গণ্য করা হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতেও নতুন মাত্রা যোগ করবে।
রিয়াদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌদি ও পাকিস্তানি শীর্ষ কর্মকর্তারা। আল জাজিরা জানিয়েছে, এমন এক সময় এ চুক্তি হলো, যখন ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসন ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গত সপ্তাহে কাতারে ইসরায়েলের হামলার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
চুক্তিটি পাকিস্তানের জন্য যেমন কৌশলগত সাফল্য, তেমনি ভারতের জন্য উদ্বেগেরও বিষয়। গত মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের পর নয়াদিল্লি বিষয়টিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার সকালে জানায়, জাতীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার দিক বিবেচনা করে চুক্তির প্রভাব খতিয়ে দেখা হবে। মুখপাত্র রণধীর জয়সাওয়াল বলেন, ভারত সব দিক বিচার করেই পদক্ষেপ নেবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক স্টিমসন সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ফেলো আসফানদিয়ার মির মনে করেন, এটি পাকিস্তানের জন্য এক ঐতিহাসিক মোড়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করলেও সেগুলো টেকেনি। চীনের সঙ্গেও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা থাকলেও আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি হয়নি। সেই প্রেক্ষাপটে সৌদির সঙ্গে এ চুক্তি একটি মাইলফলক।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তা গবেষক মুহাম্মদ ফয়সালের মতে, এটি ভবিষ্যতে পাকিস্তানের জন্য একটি ‘টেমপ্লেট’ হিসেবে কাজ করবে। যা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার দরজা খুলে দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, এই চুক্তি যৌথ প্রশিক্ষণ, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন এবং সৌদিতে পাকিস্তানি সেনা মোতায়েনের পথ সুগম করতে পারে।
অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরবের ওপর নির্ভরশীল। অপরদিকে ভারতও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি বছরের এপ্রিলে সৌদি সফর করেছেন।
তবে আসফানদিয়ার মিরের মতে, ভারত চায় সৌদি আরব পাকিস্তান থেকে দূরত্ব বজায় রাখুক। কিন্তু এই প্রতিরক্ষা চুক্তি দেখিয়ে দিল, সৌদি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককেও সমান গুরুত্ব দেয়। যা ভবিষ্যতে ভারত–পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
Comments