পাইকগাছায় শেষ মুহূর্তে প্রতিমা গড়ায় ব্যস্ত শিল্পীরা

খুলনার পাইকগাছায় শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর দেবীর আমন্ত্রণ ও বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এ উপলক্ষে পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে চলছে প্রতিমা নির্মাণ, সাজসজ্জা ও নানা আয়োজনের শেষ মুহূর্তের কাজ।
প্রতিটি পূজা মণ্ডপেই এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। বাঁশ, খড় ও মাটি দিয়ে গড়া প্রতিমার কাঠামো এখন রং-তুলি ও অলঙ্করণের মাধ্যমে সাজানো হচ্ছে নতুন রূপে। কারিগরেরা দিন-রাত পরিশ্রম করে মা দুর্গা ও তাঁর পরিবারের প্রতিমাকে সাজিয়ে তুলছেন।
পাইকগাছার এক মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করছেন কারিগর অমল পাল। তিনি বলেন, “প্রতিমার মূল কাঠামো ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। এখন শুধু সাজসজ্জা ও চোখ আঁকার কাজ চলছে। আর কিছু কাজ বাকি আছে, সেগুলো শেষ হলেই প্রতিমা পুরোপুরি প্রস্তুত হবে।”
কারিগরদের নিপুণ হাতে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার অপরূপ রূপ। চোখ আঁকার সূক্ষ্ম শিল্পকর্মে ধীরে ধীরে প্রাণ পাচ্ছে প্রতিমা।
শুধু প্রতিমা নয়, পূজা মণ্ডপ সাজাতেও চলছে সমান তৎপরতা। আলোকসজ্জা, মণ্ডপের সাজসজ্জা, বিদ্যুৎ ও সাউন্ড সিস্টেমসহ নানা প্রস্তুতি নিচ্ছেন আয়োজকেরা।
পাইকগাছা পূজা উদযাপন পরিষদের এক সদস্য জানান, “শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করতে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত।”
উৎসবকে কেন্দ্র করে মণ্ডপ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদারের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। পূজা চলাকালে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরাও নিরাপত্তা কাজে অংশ নেবেন।
পাইকগাছায় দুর্গাপূজা ঘিরে হিন্দু-মুসলিমসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও উৎসবের আনন্দ বিরাজ করছে। স্থানীয় দোকানপাট, হাটবাজারেও পূজার আমেজ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
পাইকগাছার বাসিন্দা শিখা অধিকারী বলেন, “সারা বছর অপেক্ষায় থাকি দুর্গাপূজার জন্য। প্রতিমা যখন মণ্ডপে বসে, তখনই সত্যিকারের উৎসবের আমেজ শুরু হয়।”
অন্যদিকে স্থানীয় তরুণরা জানান, পূজাকে ঘিরে মণ্ডপ সাজানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানোর আনন্দ তাদের কাছে বিশেষ অভিজ্ঞতা।
শারদীয় দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে সামাজিক সম্প্রীতির এক মহোৎসব। পাইকগাছার প্রতিটি পূজা মণ্ডপ এখন প্রস্তুত হচ্ছে ভক্ত-দর্শনার্থীদের স্বাগত জানানোর জন্য। প্রতিমা গড়ার শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা, আলোকসজ্জার ঝলকানি আর মানুষের মুখে আনন্দের হাসি একসাথে মিলে জানান দিচ্ছে—আর ক’দিন পরই শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজার মহোৎসব।
উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভাপতি সন্তোষ কুমার সরকার জানান, পাইকগাছার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১৪৩টি মন্দিরে সর্বজনীন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে পৌরসভায় ৬টি, হরিঢালীতে ১৭টি, কপিলমুনিতে ১৬টি, লতায় ১২টি, দেলুটিতে ১৩টি, সোলাদানায় ১০টি, লস্করে ১৬টি, গদাইপুরে ৭টি, রাডুলীতে ১৯টি, চাঁদখালীতে ১৫টি ও গড়ইখালীতে ১১টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
পাইকগাছা পৌরসভা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবুরাম মণ্ডল জানান, এবছর দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজামণ্ডপগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
Comments