টুঙ্গিপাড়ায় পানির বিল বৃদ্ধিতে ক্ষোভ, ইউএনওর নাম ভাঙানোর অভিযোগ

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পানি সরবরাহের মাসিক বিল হঠাৎ ১০০ টাকা বৃদ্ধি করায় স্থানীয় গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কোনো পূর্ব ঘোষণা, মাইকিং বা নোটিশ ছাড়াই পাটগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তারের নাম ভাঙিয়ে গ্রাহকদের জানানো হয়েছে যে, বিল বৃদ্ধির নির্দেশ ইউএনওর। তবে ইউএনও এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার নাম ভাঙানো হলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গ্রাহকদের অভিযোগ
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এতদিন আধা ইঞ্চি পাইপের জন্য মাসিক ২৫০ টাকা এবং পোনে এক ইঞ্চি পাইপের জন্য ৩০০ টাকা বিল পরিশোধ করা হতো। কিন্তু চলতি মাসে হঠাৎ করেই এই বিল বেড়ে যথাক্রমে ৩৫০ টাকা ও ৪০০ টাকা হয়েছে। বিল হাতে পেয়ে গ্রাহকেরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হন। অনেকে বিল ফেরত দিলে ইউনিয়ন পরিষদের লোকজন গোপনে গ্রাহকদের বাড়িতে বিল রেখে আসে।
গিমাডাঙ্গা পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল শেখ ও মো. মোস্তাকির হোসেন বলেন, “প্রতিদিন পানি সরবরাহের কথা থাকলেও সপ্তাহে মাত্র দুই দিন পানি দেওয়া হয়। আগে পরিষ্কার পানি সরবরাহ করা হলেও এখন ঘোলা ও ময়লাযুক্ত পানি আসে। তারপরও আমরা নিয়মিত ২৫০ টাকা বিল পরিশোধ করেছি। কিন্তু এই মাসে হঠাৎ ৩৫০ টাকার বিল দেওয়ায় আমরা ফেরত দিয়েছি। পরে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ইউএনওর নির্দেশে বিল বাড়ানো হয়েছে। আমরা গরিব মানুষ, ১০০ টাকা বাড়তি বিল আমাদের জন্য অনেক। এই সিদ্ধান্ত জনগণের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক।”
অন্য এক বাসিন্দা জিন্নাত শেখ বলেন, “প্রথমে ৪০০ টাকার বিল নিয়ে আসলে আমরা ফেরত দিয়েছি। পরে পরিষদের লোকজন আমাদের জানালার ফাঁক দিয়ে বিলের কাগজ রেখে যায়। চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউএনওর নির্দেশে বিল বাড়ানো হয়েছে। বিল না দিলে লাইন কেটে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।”
পানি সরবরাহ প্রকল্পের পটভূমি
টুঙ্গিপাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে পাটগাতী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পাশে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে “সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট” নির্মাণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। বর্তমানে এই প্লান্টের আওতায় ১৩০০ গ্রাহক রয়েছেন। প্রকল্প পরিচালনার জন্য পাটগাতী গ্রামীন পানি সমিতি গঠন করা হয়েছে, যেখানে চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাসকে সভাপতি এবং উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে।
চেয়ারম্যানের বক্তব্য
পাটগাতী ইউপি চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস দাবি করেন, কমিটির সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে পানির বিল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “ইউএনও ম্যাডাম এ বিষয়ে অবগত আছেন। প্রায় ১০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বাকি পড়েছে, তাই বিল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তবে তিনি ইউএনওর নাম ভাঙানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বিদ্যুৎ বিল বাকির কারণ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট উত্তর দেননি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ও ইউএনওর বক্তব্য
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “কিছুদিন আগে চেয়ারম্যান বিল বাড়ানোর জন্য মিটিং ডাকলে আমি গ্রাহকদের জানানোর জন্য মাইকিং করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কী করেছে, সেটি আমার জানা নেই।”
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, “চেয়ারম্যান আমাকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। আমি তখন বলেছি, এটি আমার এখতিয়ারের বিষয় নয়। এটা আপনাদের ব্যাপার। যদি কেউ আমার নাম ভাঙিয়ে থাকে, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গ্রাহকদের দাবি
স্থানীয় বাসিন্দারা এই বিল বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক ও চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন। তারা দাবি করেছেন, পানির গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনা করে স্বচ্ছভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এছাড়া, ইউএনওর নাম ভাঙানোর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছে।
Comments