Image description

গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের অংশ নৌকাবাইচ ও গ্রামীণ মেলা এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের তেলজুড়ী নৌকাবাইচ ও মেলা এই ঐতিহ্যের এক জ্বলন্ত প্রতীক। প্রায় দেড় শতাব্দী ধরে কুমার নদের তীরে এই আয়োজন লাখো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বাংলা ৯ আশ্বিন, অর্থাৎ ২৬ সেপ্টেম্বর, এই মেলাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই আশপাশের গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ। নদীর দুই তীরে এবং নৌকায় ভেসে আসে অর্ধলক্ষাধিক দর্শনার্থী।

নৌকাবাইচে প্রতিযোগিতার ঝড়

এ বছর নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি নৌকা। মেলার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজধানীর আরডিডি গ্রুপের কর্ণধার আজিজুল আকিল ডেভিড সিকদার। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী তিন নৌকার মালিকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, “আমাদের এলাকার এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হবে। এজন্য যা করার প্রয়োজন, আমি করব বলে আশাবাদী।”

মেলার আকর্ষণ: পসরা ও ঐতিহ্য

সকাল থেকেই কুমার নদের তীরে জমে ওঠে নানা পসরা। মিষ্টির দোকান, খেলনা, খাবার, ইলিশ মাছ এবং গেন্ডারি আখ এই মেলার ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে ক্রেতাদের ভিড় টানে। অনেক পরিবার জামাই, নাতি-নাতনিদের নিয়ে এই উৎসবে মেতে ওঠেন। রেনিনগর গ্রামের দর্শনার্থী মেহেদী হাসান বলেন, “প্রতি বছরের মতো এবারও এসেছি। নৌকাবাইচের পাশাপাশি মিষ্টি ও খেলনা কিনে পরিবারের সবাইকে খুশি করেছি।”

সাংস্কৃতিক কর্মী রতন বিশ্বাস জানান, “তেলজুড়ী মেলাকে ঘিরে এলাকাবাসী এক অনন্য উৎসবে মেতে ওঠে। কন্যারা নাইওর আসেন, জামাই-সন্তান নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেন। যেন ঈদের আমেজ বিরাজ করে।”

ব্যবসায়ীদের বিক্রিতে হাসি

মিষ্টির দোকানদার সিরাজ বিশ্বাস বলেন, “প্রায় ২০ বছর ধরে এ মেলায় মিষ্টি বিক্রি করছি। আজ শুধু আমিত্তি বিক্রি করেছি প্রায় ২ শত মন। বিক্রি ভালো হচ্ছে।” মেলার পসরা ও খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ

তবে, মেলার উৎসবমুখর পরিবেশে কিছু অসঙ্গতিও চোখে পড়েছে। ট্রলার ও সাউন্ডবক্সে ওঠতি বয়সী তরুণদের অতিরিক্ত ভিড় এবং উচ্চশব্দে গান বাজানোর কারণে পরিবেশের শ্রী নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অনেক দর্শনার্থী। তারা এজন্য মেলা কমিটির উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন।

তেলজুড়ী নৌকাবাইচ ও মেলা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের এক অমূল্য সম্পদ। এই আয়োজন শুধু বিনোদনই নয়, এলাকার মানুষের মধ্যে একতা ও আনন্দের বন্ধন তৈরি করে। তবে, পরিবেশ রক্ষা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে মেলা কমিটির আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করেন দর্শনার্থীরা।