Image description

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একটি সাধারণ ঝগড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিন ভাইকে হত্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগে কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সুতী ইউনিয়নের মাধবদী বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আয়োজিত এই কর্মসূচিতে শত শত গ্রামবাসী অংশগ্রহণ করে তিন ভাইয়ের নিরপরাধিতার দাবি জানায়।

জানা যায়, গত বছরের ২৫ এপ্রিল মাধবদী গ্রামে জুতা ব্যবসায়ী মান্নান মিয়া ও মৃত বাচ্চু মিয়ার পরিবারের মধ্যে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জেরে ঝগড়া হয়। এ ঘটনায় মান্নান মিয়ার স্ত্রী তাকমিনা আক্তার (২৩) বাদী হয়ে ১৫ মে কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, বিবাদীরা মান্নান মিয়ার মাথায় আঘাত করেছে। এ মামলায় মৃত বাচ্চু মিয়ার তিন ছেলে শরীফ (২৮), রাজীব (২৫) ও সজীব মিয়া (২৩) আসামি করা হয়।

২০২৪ সালের ৩১ জুলাই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর ২ ডিসেম্বর মান্নান মিয়া (৩৫) নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এ ঘটনাকে হত্যা মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ৩০২ ধারা (হত্যা) সংযোজন করে আদালতে একটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তিন ভাইকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

মান্নান মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসী তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা দাবি করছে, তিন ভাই মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মান্নান মিয়ার দুই ভাই হান্নান ও আরমান সিঙ্গাপুর প্রবাসী, আর অভিযুক্ত তিন ভাই সাধারণ জীবিকা নির্বাহকারী।

মাধবদী গ্রামের জুতা কারখানার শ্রমিক আব্দুল আওয়াল বলেন, “ঝগড়ার সময় আমি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম। মান্নান মিয়া কোনো আঘাত পাননি। তিনি পূর্বে স্ট্রোক করেছিলেন এবং ঘটনার সময়ও স্ট্রোক করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।”

একইভাবে, গ্রামের ব্যবসায়ী উছমান মিয়া (৭৫) ও দায়ের দোকানদার ইলিয়াছ মিয়া (৭৩) বলেন, “মান্নান মিয়া স্ট্রোকের রোগী ছিলেন। তাকে কেউ মারধর করেনি।” মান্নান মিয়ার প্রতিবেশী মাহমুদা খাতুন (২৫) ও সেলিনা খাতুন (৪০) জানান, মান্নান মিয়া হৃদরোগ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন এবং ঝগড়ার সময় হঠাৎ মাটিতে পড়ে যান।

কুলিয়ারচর থানার পরিদর্শক খোকন চন্দ্র সরকার জানান, “মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে ৩০২ ধারা সংযোজন করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।”

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী এলাকাবাসী তিন ভাইয়ের নিরপরাধিতার দাবি জানিয়ে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির দাবি তুলেছে। তারা বলছে, একটি সাধারণ ঝগড়ার ঘটনাকে বাড়িয়ে হত্যা মামলায় রূপ দেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অন্যায়।