
শারদীয় দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটিকে কেন্দ্র করে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পর্যটকের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়েছে, এবং ইতোমধ্যে আবাসিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলোর অধিকাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন জানিয়েছে, অনেক পর্যটক এখনও বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করছেন।
১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত চার দিনের এই দীর্ঘ ছুটিকে ঘিরে কুয়াকাটার পর্যটন নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত। পর্যটন ব্যবসায়ীরা এবার লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগমের আশা করছেন, যা মৌসুমের ঘাটতি পুষিয়ে দেবে বলে তারা মনে করছেন।
হোটেল-রিসোর্টে বুকিংয়ের হিড়িক
কুয়াকাটায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় আড়াই শতাধিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির হোটেলগুলোর প্রায় শতভাগ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির হোটেলগুলোতেও ৫০-৬০ শতাংশ কক্ষ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে, এবং শিগগিরই শতভাগ বুকিংয়ের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল ইয়ুথ ইন ও হলিডে হোমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ৭৭টি রুমের মধ্যে ৯০ শতাংশ ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। অভিজাত আবাসিক হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাসের এজিএম আল-আমিন খান উজ্জ্বল জানান, ২৮-৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের ৬০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে, এবং ১-৩ অক্টোবর পর্যন্ত রিসোর্ট ও ভিলা শতভাগ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ৪-৬ অক্টোবর পর্যন্তও আশানুরূপ বুকিং রয়েছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল মোতালেব শরীফ বলেন, “দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটির এই চার দিনের সুযোগ কাজে লাগাতে পর্যটকরা কুয়াকাটায় ভিড় করছেন। প্রথম শ্রেণির হোটেলগুলোর প্রায় শতভাগ এবং ছোট-বড় হোটেলগুলোর ৬০-৭০ শতাংশ কক্ষ ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে।”
পর্যটকদের জন্য জোরদার নিরাপত্তা
পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সৈকত এলাকায় কঠোর নজরদারি রাখবেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান জানান, “পর্যটকদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দর্শনীয় স্পটগুলোতে ভ্রাম্যমাণ টহলও নিয়োজিত থাকবে।”
কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইয়াসীন সাদেক বলেন, “শারদীয় দুর্গাপূজা ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় পৌর কর্তৃপক্ষ, মহিপুর থানা পুলিশ, সেনা সদস্যসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সড়ক, মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্টের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।”
পর্যটন ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা
দীর্ঘ ছুটির সুযোগে কুয়াকাটায় পর্যটকদের এই উপচে পড়া ভিড় পর্যটন শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এই মৌসুমে লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমুদ্রের নীল জল আর সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য পর্যটকদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্র। এই ছুটির মৌসুমে সাগরকন্যা কুয়াকাটা পর্যটকদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় গন্তব্য হতে চলেছে।
Comments