
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের রাহুতপাড়া-কাঠিরা খালের ওপর নির্মিত একটি জরাজীর্ণ কাঠের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন ১০টি গ্রামের শত শত মানুষ। বিকল্প কোনো সেতু না থাকায় এই ভাঙাচোরা সাঁকোই হয়ে উঠেছে প্রায় এক লাখ মানুষের একমাত্র ভরসা।
সাঁকোর বর্তমান অবস্থা
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাঁকোর কাঠের তক্তাগুলো ঢিলে হয়ে গেছে, কিছু জায়গায় তক্তা খুলে পড়েছে। নিরাপত্তার জন্য সাঁকোর দুই পাশে ব্যারিকেড দিয়ে ভ্যান ও মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও বিকল্প পথের অভাবে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন। রাতে টর্চলাইটের আলোয় পা টিপে টিপে চলতে হয়, যা চলাচলকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।
সাঁকোর গুরুত্ব
রাহুতপাড়া-কাঠিরা খালের ওপর নির্মিত এই সাঁকো ৫-৭টি গ্রামের মানুষের প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম। আশপাশে রয়েছে ডা. প্রশান্ত রায়ের বাড়ি, যেখানে বহু রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন, একটি মিশন স্কুল, হরি ঠাকুরের মন্দির এবং দুজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি। পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনো ব্রিজ নেই, ফলে এই সাঁকোটিই এলাকাবাসীর জন্য একমাত্র যোগাযোগের পথ।
সাঁকোর ইতিহাস ও রক্ষণাবেক্ষণ
২০০২ সালে নির্মিত এই সাঁকোর পর থেকে কোনো স্থায়ী সেতু নির্মাণ বা বড় ধরনের সংস্কার হয়নি। প্রতিবছর স্থানীয় যুব সমাজ নিজ উদ্যোগে সাময়িক মেরামত করে চলাচল উপযোগী রাখার চেষ্টা করে। এবার দুর্গাপূজার সময় আবারও তারা পাটাতন বসিয়ে সাঁকোটি মেরামতের চেষ্টা করেছেন।
স্থানীয়দের ভোগান্তি
স্থানীয় বাসিন্দা ডা. প্রশান্ত রায় বলেন, “আমাদের এলাকা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। একটি পাকা ব্রিজ হলে নির্বিঘ্নে চলাচল করা যেত। বর্তমানে গাড়ি তো দূরের কথা, মহিলারাও ঠিকমতো চলাচল করতে পারেন না।”
আরেক বাসিন্দা নয়ন হালদার বলেন, “রাতে টর্চলাইট নিয়ে চলতে হয়। কৃষিপণ্য বাজারজাত করা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, সব ক্ষেত্রেই ভোগান্তি। এই সাঁকোর কারণে আমাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।”
প্রশাসনের বক্তব্য
আগৈলঝাড়া উপজেলা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী রবীন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। তবে এলাকাবাসী লিখিতভাবে আবেদন করলে বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এলাকাবাসীর প্রত্যাশা
সচেতন মহলের প্রত্যাশা, এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে দ্রুত একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। একটি স্থায়ী সেতু না হলে এই অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে থাকবে।
Comments