
একসময় গ্রামবাংলার শিশুদের সবচেয়ে প্রিয় খেলার সঙ্গী ছিল মাটির খেলনা। রঙিন মাটির ঘোড়া, হাতি, পুতুল, গাড়ি বা বাঁশি—সবকিছুই তৈরি হতো স্থানীয় কুমারদের হাতে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায়, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক খেলনার আগ্রাসনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প।
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এক সময় প্রায় প্রতিটি হাটবাজারে দেখা যেত মাটির খেলনার দোকান। বিশেষ করে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সোনামুখী মেলা ছিল এই শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। দূর-দূরান্ত থেকে কুমাররা আসতেন তাদের তৈরি খেলনা বিক্রি করতে। শিশুদের মুখে লেগে থাকত আনন্দের হাসি, হাতে থাকত মাটির ঘোড়া-পুতুল।
কিন্তু এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। চীনা প্লাস্টিক খেলনা, ব্যাটারি চালিত গাড়ি ও মোবাইল গেমের দখলে চলে গেছে শিশুদের বিনোদন। ফলে কুমার সম্প্রদায়ের অনেকেই তাদের বংশানুক্রমিক পেশা ছেড়ে অন্য কাজে ঝুঁকছেন।
স্থানীয় কুমার শিল্পী রামলাল পাল বলেন, “আগে সোনামুখী মেলার সময় আমরা শত শত খেলনা তৈরি করতাম। এখন কেউ আর কেনে না। খরচ পোষাতে না পেরে আমরা অন্য কাজ করছি।”
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল হাকিম বলেন, “আমাদের ছোটবেলায় সারা বছর অপেক্ষায় থাকতাম মেলার জন্য। হাতে পেতাম মাটির ঘোড়া, পুতুল, বাঁশি—সেই আনন্দ এখন আর শিশুদের জীবনে নেই।”
সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের মতে, মাটির খেলনা শুধু খেলার জিনিস নয়, এটি ছিল গ্রামীণ জীবনের ঐতিহ্য, নান্দনিকতা ও সৃজনশীলতার প্রতিচ্ছবি। তাই তারা মনে করেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও স্থানীয় উদ্যোগের মাধ্যমে এই কুমার শিল্পকে টিকিয়ে রাখা জরুরি।
যেভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে মাটির হাঁড়ি-পাতিল, ঠিক সেভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে শৈশবের মাটির হাসি। সময় থাকতেই সংরক্ষণ না করলে, পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো শুধু বইয়ের পাতায় দেখবে—মাটির খেলনা বলে কিছু ছিল একদিন।
Comments