
আরও চার ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে হামাস বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। মরদেহগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করার কাজ চলছে।
মঙ্গলবার রাতে রেড ক্রসের তত্ত্বাবধানে কফিনে করে মরদেহগুলো ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে ইসরায়েল হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, হামাস যতক্ষণ না পর্যন্ত সব মৃত জিম্মির মরদেহ ফেরত দিচ্ছে, ততক্ষণ গাজায় মানবিক সহায়তা সীমিত রাখা হবে এবং রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে না। সোমবার হামাস ২০ জন জীবিত ও ৪ জন মৃত জিম্মিকে ফেরত দিয়েছিল।
রেড ক্রস জানিয়েছে, একই দিনে ইসরায়েলও ৪৫ জন মৃত ফিলিস্তিনির মরদেহ গাজায় ফেরত দিয়েছে। হামাসের প্রথম দফায় ফেরত দেওয়া ৪ জিম্মি ছিলেন ড্যানিয়েল পেরেটজ (২২), ইয়োসি শারাবি (৫৩), গাই ইলুজ (২৬) এবং নেপালের নাগরিক বিপিন জোশি (২৩)।
আইডিএফ বলেছে, সর্বশেষ ফেরত পাওয়া চার জিম্মির মরদেহ শনাক্তের কাজ চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, সোমবার দুপুরের মধ্যেই ৪৮ জন জিম্মিকে ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। জীবিত সবাই ফেরত এলেও, এখনো ২০ জন মৃত জিম্মির মরদেহ ফেরত পায়নি ইসরায়েল। এ নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলি সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।
আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘হামাসকে তার প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে এবং সব জিম্মিকে তাদের পরিবারের কাছে ও যথাযথ দাফনের জন্য ফেরত দিতে হবে।’
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, ‘যে কোনো বিলম্ব বা ইচ্ছাকৃত গড়িমসি যুদ্ধবিরতি চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর জবাব দেওয়া হবে।’
হামাসের দাবি, মৃত জিম্মিদের মরদেহ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি কপিতেও বলা হয়, হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব মরদেহ খুঁজে নাও পেতে পারে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, এখন একটি আন্তর্জাতিক টাস্কফোর্স নিখোঁজদের মরদেহ খুঁজে বের করার কাজ শুরু করবে।
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘একটি বড় বোঝা কাঁধ থেকে নেমেছে, কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। মৃতদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় ধাপ এখনই শুরু হচ্ছে।’
গাজার অনেক ফিলিস্তিনি জানিয়েছেন, হামাসের দেরিতে মরদেহ ফেরত দেওয়া যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। লেখক তাইসির আবেদ একে ‘যুদ্ধবিরতির জন্য বিপজ্জনক পরীক্ষা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর প্রথম ধাপেই ১০ অক্টোবর দুপুরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস টেলিভিশনকে বলেন, তিনি আলোচনার পরবর্তী ধাপ নিয়ে আশাবাদী, তবে ট্রাম্পের শর্ত খুব স্পষ্ট—‘হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে, না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।’
হামাসও জানিয়েছে, তারা অস্ত্র সমর্পণ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হয়।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও মঙ্গলবার গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। পূর্ব গাজা ও খান ইউনুসের দুটি স্থানে এসব ঘটনা ঘটে।
এদিকে, গাজায় হামাস যোদ্ধারা মুখোশ পরা অবস্থায় প্রকাশ্যে আটজন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করে, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। হামাস বলছে, তারা আইনশৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনের কাজ করছে, তবে অনেকেই মনে করছেন, হামাস এই সুযোগে প্রতিপক্ষদের দমন করছে।
সোমবার কাতার, মিসর ও তুরস্কের নেতাদের উপস্থিতিতে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। ২০টির বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন, যদিও ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন না।
চুক্তি অনুযায়ী, গাজা আপাতত ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের একটি অন্তর্বর্তী কমিটি দ্বারা পরিচালিত হবে, যার তত্ত্বাবধান করবে ‘বোর্ড অব পিস’। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে প্রশাসন হস্তান্তর করা হবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে।
তবে পরবর্তী ধাপে যেতে কঠিন আলোচনা বাকি রয়েছে—বিশেষ করে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও গাজার ভবিষ্যৎ শাসন কাঠামো নিয়ে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। সেই হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এরপর থেকে ইসরায়েলি অভিযানে কমপক্ষে ৬৭ হাজার ৮৬৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
Comments