Image description

বাসররাতে নবদম্পতির নামাজ পড়া আবশ্যক নয়, তবে এটি একটি অত্যন্ত বরকতময় ও সওয়াবের কাজ। এটি নবদম্পতির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করার এবং দাম্পত্য জীবন যেন সুখময় ও বরকতময় হয়, সেজন্য প্রার্থনা করার একটি সুবর্ণ সুযোগ।

ইসলামে বিয়ে শুধু একটি সামাজিক বন্ধন নয়, এটি একটি ইবাদত এবং আল্লাহ তা'আলার এক বিশেষ রহমত। নবদম্পতির নতুন জীবন শুরুর রাত, অর্থাৎ বাসররাত, তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রাত থেকে তারা জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করেন। এই বিশেষ রাতে যদি নবদম্পতি আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে তাদের দাম্পত্য জীবনের সূচনা করেন, তবে তা তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের অশেষ কল্যাণ বয়ে আনে।

বাসররাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত
যদিও বাসররাতে নির্দিষ্ট কোনো নামাজ পড়া ফরজ বা ওয়াজিব নয়, তবে এই রাতে নফল নামাজ পড়া অত্যন্ত মুস্তাহাব ও বরকতময়। এর কিছু গুরুত্ব ও ফজিলত নিচে দেওয়া হলোঃ
১. আল্লাহর রহমত আকর্ষণ: নতুন জীবনের শুরুতে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হলে আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি তাঁর রহমতের দ্বার খুলে দেন। এই নামাজ তাদের দাম্পত্য জীবনে বরকত নিয়ে আসে।
২. শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তি: নতুন দাম্পত্য জীবন শয়তানের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। শয়তান সবসময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর আশ্রয় চাইলে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং তাদের বন্ধন আরও মজবুত হয়।
৩. দোয়া কবুলের সুবর্ণ সুযোগ: এই রাতে নবদম্পতি আল্লাহর কাছে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য, একে অপরের জন্য, এবং তাদের আগত প্রজন্মের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করতে পারেন। এমন সময়ে করা দোয়া আল্লাহ তা'আলা কবুল করেন।
৪. পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি: স্বামী-স্ত্রী যখন একসাথে আল্লাহর সামনে দাঁড়ান, তখন তাদের মধ্যে আধ্যাত্মিক সংযোগ স্থাপিত হয়। এটি তাদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আস্থা বাড়াতে সাহায্য করে।
৫. সুন্নাহর অনুসরণ: যদিও বাসররাতের নির্দিষ্ট নামাজ নিয়ে সরাসরি কোনো স্পষ্ট হাদিস নেই, তবে যে কোনো শুভ কাজ নামাজের মাধ্যমে শুরু করা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাধারণ সুন্নাহ। উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো নতুন বিষয় দেখতেন, তখন সালাত আদায় করতেন এবং দোয়া করতেন।

নামাজের নিয়ম
নবদম্পতি একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। নামাজের পর তারা আল্লাহর কাছে নিজেদের জন্য এবং একে অপরের জন্য দোয়া করবেন।
নিয়ত: "আমি দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করছি, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।"
আদায় পদ্ধতি: সাধারণ নফল নামাজের মতোই দুই রাকাত নামাজ আদায় করবেন।
দোয়া: নামাজ শেষে স্বামী তার স্ত্রীর কপালে হাত রেখে এই দোয়া পড়তে পারেন: "আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খইরাহা ওয়া খইরা মা জাবালতাহা আলাইহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা আলাইহি।" (অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এর (স্ত্রীর) কল্যাণ এবং যে স্বভাবের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছ তার কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর আমি তোমার কাছে এর অনিষ্ট এবং যে স্বভাবের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছ তার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)
দুজনেই নিজেদের ভাষায় আল্লাহর কাছে তাদের দাম্পত্য জীবনের সুখ, সমৃদ্ধি, ঈমানী দৃঢ়তা, ধৈর্য এবং নেক সন্তানের জন্য দোয়া করতে পারেন।