Image description

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) তাদের 'প্রি-ইলেকশন অ্যাসেসমেন্ট মিশন'-এর প্রতিবেদনে ২০২৬ সালের সম্ভাব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে 'নাজুক ও অনিশ্চিত' বলে উল্লেখ করেছে। অক্টোবরের ২০ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত ঢাকায় পরিচালিত পাঁচ দিনের এই মিশনের পর্যবেক্ষণে নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা, নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনাস্থা, আইনগত কাঠামোর অসম্পূর্ণতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র বিভাজনের চিত্র উঠে এসেছে।

আইআরআই জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণ-আন্দোলনের পর ক্ষমতায় আসা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১১টি কমিশন গঠন করে এবং এসবের সুপারিশ থেকে ৮৪ দফা 'জুলাই সনদ' প্রণয়ন করা হয়।

এই সনদকে 'গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের নকশা' হিসেবে দেখা হলেও এটি কখন এবং কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। বিএনপি চায় নির্বাচন শেষে বাস্তবায়ন, ইসলামপন্থি দলগুলো নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি তুলছে। নতুন দলগুলো 'বাংলাদেশ সংবিধান ২০২৬' নামে এটি নতুন করে অনুমোদনের প্রস্তাব দিয়েছে। আইআরআই'র পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রকৃত চাবিকাঠি হবে আগামী সংসদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

নির্বাচনী প্রস্তুতিতে উন্নতি হলেও শঙ্কা রয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা করে আইআরআই বলেছে, ৪২ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্রে ৯ লাখ কর্মী মোতায়েনের প্রস্তুতি, মৃত ভোটার বাদ ও নতুন ভোটার যুক্ত করে তালিকা শুদ্ধিকরণ, প্রবাসীদের জন্য প্রথমবারের মতো ডাকযোগে ভোটের ব্যবস্থা এবং ইভিএম বাতিল করে কাগুজে ব্যালটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই কমিশন। তবে উদ্বেগ হলো- আইনগত কাঠামো এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

মাঠপর্যায়ে নিরপেক্ষতার প্রশ্ন, সামাজিক মাধ্যমে ভ্রান্ত/মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি, প্রবাসী ভোটে অসঙ্গতির আশঙ্কা এবং সশস্ত্র বাহিনী জড়িত হওয়ায় অতিরিক্ত সামরিকীকরণের শঙ্কা স্পষ্ট হচ্ছে।

দলগত রাজনীতি বহুমাত্রিক হলেও সংঘাতপ্রবণ হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়- নতুন তরুণ নেতৃত্বের উত্থান গণতান্ত্রিক সংস্কারে নতুন সম্ভাবনা এনেছে, প্রথমবার রেকর্ড ভোটার সংখ্যা। তবে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। মনোনয়ন বণ্টনে স্বচ্ছতার অভাব স্পষ্ট হয়ে দেখা গেছে। স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি নির্বাচনকে প্রতিনিধিত্ব সংকটে ঠেলে দিতে পারে। নারী নেতৃত্বেও গুরুতর বৈষম্য বিদ্যমান।

গুম-খুন কমেছে, মামলা-হয়রানি অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে। এনজিও কার্যক্রমে এখনো কঠোর আমলাতন্ত্র, নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন প্রক্রিয়া অস্বচ্ছতা, নারীদের প্রতি হয়রানি ও সহিংসতা উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়ে গেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে আইআরআই ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে: জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সময়সীমা ও পদ্ধতি স্পষ্ট করা, নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো, মনোনয়ন বণ্টনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারীদের অনুমোদনে স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক অর্থায়নে জবাবদিহি বাড়ানো।

সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ আশা ও অনিশ্চয়তার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া পরিবর্তনের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে টেকসই হবে কিনা- এখন সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।