‘পাতিলে নাই ভাত’—দারিদ্র্য ও অসুস্থতায় মাধবপুরের আয়েশা বেগম
বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদে বলা হয়েছিল—‘পাতিলে নাই ভাত, তবুও প্রতিদিন ঘরে আসে অতিথি।’ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার প্রত্যন্ত উত্তরশিক গ্রামের বিধবা নারী আয়েশা বেগমের জীবনে আজ যেন সেই কথাটিই জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তীব্র দারিদ্র্য আর অসুস্থতার বেড়াজালে আটকে থাকা এই নারীর জীবন যেন এক চলমান সংগ্রাম।
জানা গেছে, স্বামীহারা আয়েশা বেগম মোড়পাড়ার বাসিন্দা। কিশোর বয়সী অসুস্থ ছেলে ও বিবাহযোগ্য এক মেয়েকে নিয়ে ছোট্ট একটি চায়ের দোকানই ছিল তার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই দোকান ও আশ্রয় দুটিই হারাতে হয়েছে তাকে। আশ্রিত অবস্থায় রাস্তার ধারে ছোট্ট একটি ঘরে থাকলেও একসময় সেখান থেকেও উচ্ছেদ হন তিনি। পরবর্তীতে স্থানীয় এক ফার্নিচার ব্যবসায়ী দয়া করে নিজের দোকানের অর্ধেক অংশে আশ্রয় দেন। দোকানের একপাশে কাঠ কাটার তীব্র শব্দ, অন্যপাশে অসহায় এক মা ও তার দুই সন্তানের বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
আয়েশা বেগম শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। ছেলে আক্রান্ত বিরল এক রোগে, আর মেয়েটি বিবাহযোগ্য হলেও দারিদ্র্যের কারণে বিয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি ভূমি অফিস থেকে তাকে ভূমিহীন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ৩ শতাংশ খাস জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় সেখানে এখনও পা রাখতে পারেননি তিনি।
বর্তমানে চরম আর্থিক সংকট আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে আয়েশা বেগমের পরিবারের। কখনও না খেয়ে থাকতে হয়, কখনও আবার শাকপাতা ও ভাঙা চালই একমাত্র ভরসা। শীতের আগমনে বেড়েছে তার শ্বাসকষ্ট, বেড়েছে জীবন নিয়ে আশঙ্কা।
নিজের চেয়ে বড় চিন্তা এখন অসুস্থ ছেলেকে মিথ্যা মামলার হাত থেকে রক্ষা করা এবং মেয়েটিকে একটি ভালো ঘরে বিয়ে দেওয়া।
স্থানীয়দের মতে, আয়েশা বেগম দয়া নয়, টেকসই সরকারি সহায়তা চান—যেন সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়, আর নিজের চিকিৎসাটুকু অন্তত নিশ্চিত করা যায়।
হবিগঞ্জ আদালতের প্রফেশনাল অফিসার ও মাধবপুর উপজেলা সমাজসেবার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নিপুন রায় বলেন, ‘আয়েশা বেগম যদি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য আবেদন করেন, আমরা সুপারিশ করব। পাশাপাশি অন্যান্য দিক থেকেও সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’




Comments