মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার: সাভারের তুরাগে ফুট ওভারব্রিজ নির্মানের দাবি
ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক দেশের ব্যস্ততম সড়কগুলোর একটি। এই সড়কের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো তুরাগ ভাঙা ব্রিজ এলাকা। ভাকুর্তার ৩১ গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এ পথেই চলাচল করেন। একদিকে ঢাকামুখী, অন্যদিকে আরিচামুখী সড়ক। মাঝখানে ছোট একটি ডিভাইডার। ভাঙা ব্রিজ, অর্থাৎ মুগরাকান্দা তুরাগ এলাকায় বাস থেকে নেমে রাস্তা পারাপার করতে হয় জীবন বাজি রেখে।
রবিবার সকাল ১০টার দিকে ব্যস্ত সড়কটিতে আরিচামুখী দিক থেকে বিপরীত পাশে যেতে উদ্যত হন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। কিন্তু সড়কে দ্রুতগামী গাড়িগুলোর কারণে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। কিছু সময় পর এক শিক্ষার্থী এগিয়ে গিয়ে প্রবীণ ব্যক্তিটিকে ভয়ভীতির মধ্যেও রাস্তা পার হতে সাহায্য করলেন।
শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি ভাকুর্তা থেকে প্রতিদিন সাভার কলেজে ক্লাস করতে যান। যাওয়ার সময় তেমন সমস্যা না হলেও ফেরার পথে বিপরীত পাশ থেকে রাস্তা পার হতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় তাঁকে।
তাঁর মতো আরও অনেককেই দেখা গেল ফুট ওভারব্রিজ না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পারাপার হতে।
সাভারের তুরাগ (ভাঙা ব্রিজ) এলাকায় ঢাকা–আরিচা মহাসড়কের উপর ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধনও করেছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।
সেই মানববন্ধন চলাকালীন সময়ে এই ভয়াবহ দৃশ্য চোখে পড়ে প্রতিবেদকের।
রবিবার (৯ নভেম্বর) সকালে সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাঙা ব্রিজ এলাকায় অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে ভাকুর্তা ইউনিয়নের ৩০টিরও বেশি গ্রামের বাসিন্দা, বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা অভিযোগ করেন, ভাকুর্তা-তুরাগ সড়কের ভাঙা ব্রিজ এলাকায় ফুট ওভারব্রিজ না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন পার হতে হচ্ছে ব্যস্ত এই মহাসড়ক।
ভাকুর্তা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ভাকুর্তা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, “তুরাগ-ভাকুর্তা এলাকার প্রায় তিরিশটি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। ফুট ওভারব্রিজ না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা দাবি করছি, দ্রুত এখানে একটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হোক।”
তিনি আরও বলেন,“এলাকার বিভিন্ন সড়কে ময়লার স্তূপ পড়ে আছে, যা দুর্গন্ধ সৃষ্টি করছে। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন দ্রুত সড়কগুলো পরিষ্কার করা হয়। আগামী সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।”
ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল মুমিন বলেন, “ঢাকা জেলা মহাসড়কের এই অংশ দিয়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি গ্রামের মানুষ শহরে যায়। এখানে একটি ফুট ওভারব্রিজ অত্যন্ত প্রয়োজন। দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে, আমরা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে আছি।”
ভাকুর্তা স্কুলের শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার বলেন, “আমাদের স্কুলে যেতে হলে প্রতিদিন এই ব্যস্ত সড়ক পার হতে হয়। ফুট ওভারব্রিজ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যেতে হয়। আমাদের এখানে খুব দ্রুত একটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন।”
ভাকুর্তা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি নূর মোহাম্মদ বলেন, “মহাসড়কে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের ভাকুর্তা ভাঙা ব্রিজ এলাকায় একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
এছাড়া এই সড়কের কোথাও কোনো পুলিশ বক্স বা জেব্রা ক্রসিং নেই। বেপরোয়া গতিতে চলা মোটরসাইকেল ও গাড়ির কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। আমরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।”
এদিকে, এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন, ভাঙা ব্রিজ সংলগ্ন মহাসড়কে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তারা উপজেলা প্রশাসনের কাছে দ্রুত ময়লা অপসারণের দাবি জানান। অন্যথায় সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে উপজেলা পরিষদ ঘেরাওয়ের কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।




Comments