বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম গত তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সম্ভাব্য দীর্ঘ শাটডাউনের সমাপ্তি এবং আগামী মাসে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা—এই দুটি প্রধান কারণ স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্পট গোল্ডের দাম ০.৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে ৪,১৪০.৬০ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২৩ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। এদিন সর্বোচ্চ মূল্য ৪,১৪৮.৭৫ ডলারে পৌঁছালেও, এটি এখনও ২০ অক্টোবরের রেকর্ড ৪,৩৮১.২১ ডলার থেকে কিছুটা নিচে রয়েছে। ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য মার্কিন স্বর্ণ ফিউচারসও ০.৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে ৪,১৪৭.২০ ডলার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার পুনরায় কার্যক্রম শুরু করলে অর্থনৈতিক তথ্যপ্রবাহ আবার চালু হবে, যা ডিসেম্বরে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করবে। স্যাক্সো ব্যাংকের পণ্য কৌশল বিভাগের প্রধান ওলে হ্যানসেন বলেন, সরকারি কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলে নতুন অর্থনৈতিক তথ্য আসবে, যা ফেডারেল রিজার্ভকে ডিসেম্বরে সুদের হার কমাতে উৎসাহিত করতে পারে।
বর্তমানে বাজারে ৬৪ শতাংশ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে যে ফেড আগামী মাসে এক-চতুর্থাংশ পয়েন্ট সুদের হার কমাবে। হ্যানসেন আরও জানান, সরকারি কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলে নতুন ব্যয় এবং অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে, যা স্বর্ণের দামের পক্ষে অনুকূল। সাধারণত, স্বর্ণ কোনো সুদ বা আয় দেয় না, তবে কম সুদের পরিবেশে এর চাহিদা বাড়ে।
ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারকরা এখনও নীতিগত দিক নিয়ে বিভক্ত। এ বছরের শুরুর দুই দফা হার কমানোর পর চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এখন ভিন্ন মতামতের মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছেন। এদিকে, ফেড গভর্নর স্টিফেন মিরান সোমবার বলেছেন, ডিসেম্বরে ৫০ বেসিস পয়েন্ট হার কমানো উপযুক্ত হতে পারে।
গত সপ্তাহের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান কমেছে এবং নভেম্বরের শুরুতে ভোক্তা আস্থা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে। জুলিয়াস বেয়ার-এর বিশ্লেষক কারস্টেন মেঙ্কে জানিয়েছেন, স্বর্ণ ও রূপার বাজারের মৌলিক পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে এবং এখনও বিনিয়োগকারীদের ‘ফিয়ার অফ মিসিং আউট’ মনোভাব কাজ করছে।
এদিন অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দামও বেড়েছে:
রূপা: ১.৩% বেড়ে প্রতি আউন্সে ৫১.২০ ডলার
প্লাটিনাম: ০.৯% বেড়ে ১,৫৯২.২৮ ডলার
প্যালাডিয়াম: ১.৮% বেড়ে ১,৪৪০.৯৫ ডলার
স্বর্ণের এই ঊর্ধ্বগতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে বিনিয়োগকারীরা এখনও নিরাপদ সম্পদে আস্থা রাখছেন, বিশেষত বৈশ্বিক অর্থনীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নীতির অনিশ্চয়তার মধ্যে।




Comments