আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠজুড়ে এখন সোনালী পাকা ধানের দোলা, পাকা ধানের গন্ধে মুখরিত চারপাশ। আনন্দে ভরে উঠেছে কৃষকের মুখ।
ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই পুরোদমে মাঠে নামবেন কৃষকেরা। কেউ ধান কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন, কেউ আবার নতুন ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তবে এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না থাকায় কৃষকদের অতিরিক্ত সেচ দিতে হয়েছে, এতে কিছুটা উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবুও ফলন ভালো ও বাজারে ধানের দাম সন্তোষজনক থাকায় কৃষকের মুখে এখন স্বস্তির হাসি।
মাধবপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে— যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ হেক্টর বেশি।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, মাঠজুড়ে পাকা ধান দুলছে বাতাসে। কৃষকেরা উৎসবমুখর পরিবেশে ধান কাটার কাজে ব্যস্ত।
শিমূলঘর গ্রামের কৃষক মো. ফুরুক মিয়া বলেন, “আমি তিন বিঘা জমিতে ব্রি-৪৯ জাতের ধান রোপণ করেছি। উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু ধানের দাম ভালো। আশা করছি আগের চেয়ে বেশি লাভ হবে।”
একই গ্রামের কৃষক আয়নাল হক চৌধুরী জানান, “আগে আমন ধান কাটা হতো অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময়ে। এখন আগাম ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষে কম সময়ে ভালো ফলন পাচ্ছি। এতে একই জমিতে পরবর্তীতে অন্য ফসলের চাষও সম্ভব হচ্ছে, ফলে আয় বাড়ছে।”
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, এ বছর ধানে রোগবালাই প্রায় নেই বললেই চলে। অগ্রহায়ণের শেষের আগেই ধান পাকতে শুরু করেছে। ফলে খরচ বাদ দিয়েও ভালো লাভের আশা করছেন তাঁরা।
মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন বাজারের ধান ব্যবসায়ী মো. কালা মিয়া জানান, বর্তমানে নতুন ধান প্রতি মণ ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর একই ধানের দাম ছিল ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা।
মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজিব সরকার বলেন, “এই মৌসুমে উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। আগাম ও স্বল্পমেয়াদী জাতের ধান চাষে উৎপাদন বেড়েছে এবং একই জমিতে পরবর্তীতে সরিষা বা আলু চাষের সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
ফলনের এই সাফল্যে কৃষকের মুখে যেমন হাসি, তেমনি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা জাগিয়েছে মাধবপুরের কৃষিক্ষেত্রে।




Comments