জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় পড়া শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায় ছয় ভাগে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করছেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায় ঘোষণা ও সরাসরি সম্প্রচার: রায় পড়ার সময় বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার উল্লেখ করেন যে, এই রায় ৪৫৩ পৃষ্ঠার এবং ছয়টি ভাগে এটি ঘোষণা করা হবে। রায় ঘোষণার সময় আদালত কক্ষে আইনজীবী, জুলাই আন্দোলনের কর্মী, গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং গণমাধ্যম কর্মীসহ কয়েকশ মানুষ উপস্থিত আছেন।
এই রায় ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করছে বিটিভি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এছাড়াও ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি দেখানো হচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকার দশটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বড় পর্দায় রায় ঘোষণার কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে।
মামলার পটভূমি: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হয়।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিনই এই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
আসামি ও অভিযোগ: মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। তাদের মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে প্রথম।
তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
১. উসকানি।
২. মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের দমন করার নির্দেশ।
৩. রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে হত্যা।
৪. রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে হত্যা।
৫. আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ।
সাক্ষ্য ও যুক্তিতর্ক: এই মামলায় ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ৩ আগস্ট। প্রথম সাক্ষী হিসেবে জুলাই-আগস্টের বীভৎসতার চিত্র তুলে ধরেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। গত ৮ অক্টোবর মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরার মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণের ধাপ শেষ হয়।
এরপর গত ২৩ অক্টোবর প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন রাখা হয়। এদিন রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ঠিক করা হয়।




Comments