Image description

ঢাকার ২৭৪টি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে মাত্র একটি বাদে বাকি ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানই পড়েছে ঢাকার তিনটি সংসদীয় আসন এলাকায়। ঢাকায় মোট ২০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে কেন কেবল তিনটি আসনে এই বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৭৩টি প্রতিষ্ঠান সংসদীয় আসন ঢাকা-৯, ঢাকা-১০ এবং ঢাকা-১১ এলাকায়। অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ১৪৫টি মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দিরের অবস্থান ঢাকা-১০ আসনের অন্তর্ভুক্ত ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ ও নিউমার্কেট এলাকায়।

২৭৪টি প্রতিষ্ঠানের জন্য মোট বরাদ্দ ৮ কোটি ২৯ লাখ টাকার অর্ধেকের বেশি ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ঢাকা-১০ আসনে। মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এই আসনের ভোটার হয়েছেন, এখান থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন বলেও গুঞ্জন আছে। এমন প্রেক্ষাপটে এই বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ওই সব প্রতিষ্ঠানে কাদের সুপারিশে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না।

বরাদ্দের বাকি ১২৮টি প্রকল্প অন্য যে দুটি আসনে দেওয়া হয়েছে সেই দুটি হলো—সবুজবাগ, খিলগাঁও থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৯ আসন ও বাড্ডা-রামপুরা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১১ আসন। এই দুটি আসন থেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন অভ্যুত্থানে আসিফ মাহমুদের সহযোদ্ধা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।

তাহলে কি ছাত্র উপদেষ্টা ও এনসিপি নেতারা ঢাকার যেসব আসনে নির্বাচন করবেন, শুধু সেসব এলাকার মসজিদ-মাদ্রাসায় ভোটের আগে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে? জবাবে উপদেষ্টা আসিফ বলেছেন, ‘বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার সময় তো শেষ হয়ে যায়নি। সারা দেশের অন্য অনেক জায়গায়ও তো বরাদ্দ গেছে।’

নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, তপশিল ঘোষণার পর আর এ ধরনের প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া যায় না। আগামী ডিসেম্বরের শুরুর দিকেই জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে বৈধতার প্রশ্ন এখনো না উঠলেও এই বরাদ্দ নিয়মমাফিক হয়েছে কি না এবং তার সঙ্গে নৈতিক ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে জেলা পরিষদের এডিপি হিসেবে বিশেষ কিছু আসনের জন্য যে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে দৃষ্টিকটু।’

এর আগে গত ৫ অক্টোবর ঢাকার ১৪টি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ৪২ লাখ টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, যেগুলো ছিল ঢাকার অন্তত ১০টি আলাদা আলাদা এলাকায়। যে কারণে সেটি নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্নও ওঠেনি।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘সারা দেশেই তো বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তার সবগুলো নিয়ে রিপোর্ট না করে কেন ঢাকার আসন নিয়ে বিবিসি বাংলা রিপোর্ট করছে?’

তবে, পরে তিনি বলেছেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বরাদ্দের জন্য আবেদনগুলো কারা করেছে, আমি জানি না। এগুলো খোঁজও রাখা যায় না। আবেদনগুলো বিভিন্নভাবে আসে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়।’

আগামী মাসের শুরুর দিকেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল। উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করে ঢাকার কোনো আসন থেকে আসিফ মাহমুদ নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এই বিশেষ বরাদ্দ নির্বাচনে আসিফ মাহমুদকে বাড়তি কোনো সুবিধা দেবে কি না জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, সরকার যখন বিভিন্ন খাতে যৌক্তিক সংস্কার নিয়ে কাজ করছে, সেই মুহূর্তে বিশেষ বিশেষ আসনের জন্য এমন বিশেষ বরাদ্দ অনাকাঙ্ক্ষিত।