টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার ৪০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে এবং দুই লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে—রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এমন তথ্যে জনমনে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও বিধিমালা না মেনে গড়ে ওঠা বহুতল ভবনের এই শহরে আদৌ কোনো নিরাপদ এলাকা আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার নিরাপত্তা মূলত দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে: শহরের ভূতাত্ত্বিক গঠন বা মাটির প্রকৃতি এবং অবকাঠামো বা ভবনের মান।
ভূতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার আদি অংশ বিশেষ করে উত্তর দিকের মাটি মধুপুরের লাল মাটি দিয়ে গঠিত, যা বেশ শক্ত ও ভূমিকম্প সহনীয়। ভূতাত্ত্বিক গঠন বিবেচনায় নিলে ঢাকার রমনা, মগবাজার, নিউমার্কেট, লালমাটিয়া, খিলগাঁও, মতিঝিল, ধানমন্ডি, লালবাগ, মিরপুর, গুলশান ও তেজগাঁও এলাকাগুলো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
ভূতত্ত্ববিদ সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, মোগল আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত শক্ত লাল মাটির এলাকাগুলোতেই বসতি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে শহর পূর্ব-পশ্চিমে সম্প্রসারিত হওয়ার সময় জলাশয় ও নিচু জমি ভরাট করা হয়, যা নরম পলিমাটি দিয়ে গঠিত এবং ভূমিকম্পের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
মাটি শক্ত হলেও ঢাকার বাসিন্দারা পুরোপুরি নিরাপদ নন বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রধান কারণ অবকাঠামোগত দুর্বলতা।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, কোনো এলাকা নিরাপদ কি না, তা শুধু মাটি দিয়ে বিচার করা যাবে না। ভবনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা পর্যন্ত ঝুঁকি থেকেই যায়।
শক্ত মাটির এলাকায় ঝুঁকি তৈরির পেছনে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন:
১. পুরানো ভবন: এসব এলাকায় অনেক ভবন অত্যন্ত পুরনো এবং দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।
২. অবৈধ সম্প্রসারণ: অনেক ভবনের অনুমোদন বা ভিত্তি হয়তো দুই-তিন তলার জন্য, কিন্তু সেখানে নিয়ম ভেঙে সাত-আট তলা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ভিত্তির দুর্বলতায় ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
৩. নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী: নতুন ভবনের ক্ষেত্রেও বিল্ডিং কোড না মানা এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রাজউকের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে জানান, ঢাকার ৯০ শতাংশ ভবনই বিল্ডিং কোড বা নির্মাণ বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে। এছাড়া গত ২১ নভেম্বর ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর জরুরি জরিপ চালিয়ে রাজউক ঢাকায় ৩০০টি ভবনকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মাটির গুণাগুণ নয়, ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবিলায় ভবনগুলো নিয়ম মেনে তৈরি হয়েছে কি না এবং পুরনো ভবনগুলো সংস্কার করা হচ্ছে কি না—সেটিই এখন মূল বিবেচ্য বিষয়।




Comments