সদরপুর সরকারি কলেজ
একাডেমিক ভবনে শিক্ষকদের বসবাস ও কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ
ফরিদপুরের সদরপুর সরকারি কলেজে একাডেমিক ভবন দখল করে বসবাস এবং শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করে কোচিং বাণিজ্য চালানোর অভিযোগ উঠেছে কতিপয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এছাড়া শিক্ষকদের নিয়মিত কলেজে অনুপস্থিত থাকা এবং ক্লাসে পাঠদান না করার কারণে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার পরিবেশ ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজটির একাডেমিক ভবনের একাধিক কক্ষ দখল করে ‘টিচার্স কোয়ার্টার’ বানিয়ে বসবাস করছেন কয়েকজন শিক্ষক। সরকারি ভবন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। এর চেয়েও গুরুতর অভিযোগ শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কোচিং বাণিজ্য চালানো। সরকারি ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারসহ সপ্তাহের প্রতিদিনই সরকারি বিদ্যুৎ ও আসবাব ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষে ব্যক্তিগত ব্যাচ পড়াচ্ছেন শিক্ষকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যাররা ক্লাসে ঠিকমতো পড়ান না। কিন্তু তাদের কাছে প্রাইভেট পড়লে ওই একই ক্লাসরুমে খুব যত্ন করে পড়ান। সরকারি ফ্যান, লাইট আর বেঞ্চ ব্যবহার করে তারা ব্যক্তিগত ব্যবসা করছেন।’
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও নিয়মিত কলেজে আসেন অর্ধেকেরও কম। শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে নিয়মবহির্ভূতভাবে চারজন ‘ভলান্টিয়ার’ শিক্ষক দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তদারকি না থাকায় নিয়মিত ক্লাস হয় না, ফলে সিলেবাস শেষ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম (ছদ্মনাম) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা অনেক আশা নিয়ে এই কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু এখানে পড়াশোনার চেয়ে স্যারদের ব্যবসার চিন্তা বেশি। একাডেমিক ভবনে স্যাররা থাকবেন কেন? আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।’
অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকারি প্রতিষ্ঠানটি এখন অনেকটা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। শিক্ষকরা ক্লাসে না এসে কোচিং নিয়ে ব্যস্ত থাকায় গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে এই অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে একাডেমিক ভবনে বসবাসরত এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সদরপুরে থাকার জন্য পর্যাপ্ত সরকারি কোয়ার্টার নেই। তাই বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়েই এখানে থাকছি। তবে এতে ক্লাসের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।’
শ্রেণিকক্ষে কোচিং করানোর বিষয়ে আরেক শিক্ষক বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধেই অতিরিক্ত সময় দিচ্ছি। একে কোচিং বা ব্যবসা বলা ঠিক নয়।’
এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. এনামুল হক বলেন, ‘শিক্ষকদের উপস্থিতির বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। আর এলাকায় থাকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে একাডেমিক ভবনে থাকছেন।’
শ্রেণিকক্ষে প্রাইভেট পড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি সব সরকারি কলেজেই হচ্ছে। আমাদের শিক্ষকরাও কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে আগে থেকেই কলেজের রুম ব্যবহার করে কোচিং করাচ্ছেন।’
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ শাওন বলেন, ‘সদরপুর সরকারি কলেজের অভিযোগগুলো সম্পর্কে আমি অবগত হলাম। আমি এখানে নতুন যোগ দিয়েছি। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’




Comments