শীতের হিমেল হাওয়া আর প্রকৃতির টানে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে, যা হ্রদ, পাহাড় ও সবুজ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত করে তুলেছে পর্যটন স্পটগুলোকে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই ধারাবাহিকতা পুরো শীতকাল জুড়ে দেখতে আশাবাদী, বলছেন, পর্যটন খাত আবারও সজীব হয়ে উঠবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতি বছর শীতকালে রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নতুন মাত্রা পায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শহরের ঝুলন্ত সেতু, আরএইচডি লেক ভিউ গার্ডেন, সুবলং ঝর্ণা, পলওয়েল পার্ক এবং সাজেক ভ্যালিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণী এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা দর্শনার্থীরা পাহাড়ের কোলে আঁকা-বাঁকা সড়কে শীতের আমেজ দারুণভাবে উপভোগ করছেন।
এক দিক দিয়ে এই শীতের মৌসুম হলো পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। শীতে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা রাঙ্গামাটির পাহাড়গুলো দূর থেকে দেখে মনে হয় প্রকৃতি যেন সবটুকু উজাড় করে দিয়ে পেখম মেলে বসে আছে এই এলাকার পর্যটন শিল্পের সৌন্দর্য বিকাশে। যান্ত্রিক জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার জীবনের ছক থেকে বেরিয়ে এসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা।
এদিকে রাঙ্গামাটি জেলার পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে পার্বত্য এই অঞ্চলের সহজ-সরল পাহাড়ি-বাঙালি মানুষগুলোর আয় রোজগারও। পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটন ব্যাবসার সঙ্গে আবাসিক হোটেল-রেস্টুরেন্ট, হস্তশিল্পের কারুকাজ, চাকমা ও মারমা সম্প্রদায়ের তৈরি তাঁতের কাপড়সহ ঐতিহ্যবাহী ব্যাবসাগুলোর বেচা-বিক্রিও জমে উঠেছে।
স্থানীয় হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোর অধিকাংশ কক্ষই ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা আশানুরূপ বেড়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
টেক্সটাইল ব্যবসায়ী বাঁধন মিত্র জানান, রাঙ্গামাটিতে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। বেচা-কেনাও মোটামুটি হচ্ছে। তবে আশা করবো, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আরো বেচা-কেনা বাড়বে।
টুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী জানান, বর্তমানে মোটামুটি টুরিস্ট বোট ভাড়া হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে আরো ভালো হবে।
প্রকৃতির সান্নিধ্যে শীতের হিমেল হাওয়া উপভোগ করতে আসা অনেক পর্যটক কাপ্তাই লেকে নৌ-বিহারে বের হচ্ছেন। পাহাড়, লেক আর মেঘের মিতালি পর্যটকদের মুগ্ধ করছে।
সিলেট থেকে আসা পর্যটক মো. আজাদ জানান, রাঙ্গামাটিতে এবার প্রথম এলাম এবং অনেক জায়গায় ঘুরছি। ঝুলন্ত ব্রিজ, পাহাড়ে প্রকৃতি আর সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ খুব ভালো লেগেছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক মো. মনির জানান, রাঙ্গামাটিতে এসে এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। খুব সুন্দর মনোরম পরিবেশ পেয়েছি এবং ঝুলন্ত ব্রিজ দেখে খুবই আনন্দিত এবং আমাদের যে ক্লান্তি ছিল তা দূর হয়ে গেছে।
রাঙ্গামাটি পর্যটন ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা জানান, শীতকে ঘিরে রাঙ্গামাটিতে পর্যটক বাড়ছে। বর্তমানে হোটেলে ৩০% রুম বুকিং আছে। এছাড়াও ডিসেম্বর মাস জুড়ে অগ্রিম বুকিং আছে ৮০%। তিনি আরো জানান, সামনে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে পর্যটকের প্রচুর সমাগম হবে। এতে সরকার ভালো রাজস্ব পাবে।
তবে, পর্যটকদের এই ভিড়ের কারণে স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। দর্শনার্থীদের ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দদায়ক করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে, শীতের শুরুতেই রাঙ্গামাটি যেন পর্যটকদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।




Comments