Image description

আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় হতে যাচ্ছে। এদিন কেবল নতুন সরকারই নির্বাচিত হবে না, বরং ব্যালটের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে দেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রকাঠামোর ভবিষ্যৎ। নির্বাচনের পাশাপাশি অনুষ্ঠিতব্য ঐতিহাসিক গণভোটে যদি ‘হ্যাঁ’ ভোট বেশি পড়ে, তবে ‘জুলাই সনদ’ অনুযায়ী আমূল পরিবর্তন আসবে রাষ্ট্র পরিচালনায়।

‘হ্যাঁ’ ভোট জয়ী হলে যা ঘটবে:

১. সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন: গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠিত হবে। নির্বাচিত এমপিরা আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। এই পরিষদ তাদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করবে।

২. দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও উচ্চকক্ষ গঠন: সবচেয়ে বড় কাঠামোগত পরিবর্তন হবে আইনসভায়। সংসদ হবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্য নিয়ে একটি ‘উচ্চকক্ষ’ গঠিত হবে। সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এই উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধন করতে হলে এই উচ্চকক্ষর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন বাধ্যতামূলক থাকবে।

৩. বাধ্যতামূলক ৩০টি সংস্কার: জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে ৩০টি প্রস্তাব রাখা হয়েছে, বিজয়ী দলগুলো তা বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্টকরণ (মেয়াদ সীমিতকরণ)।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি।

বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।

সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি।

বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন।

৪. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা: নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকেই গঠিত ও পরিচালিত হবে।

এই গণভোটে ভোটারদের সামনে একটিমাত্র প্রশ্ন রাখা হবে, যার উত্তর ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’-তে দিতে হবে।

প্রশ্নটি হলো: “আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?”

মূলত ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বা ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে জনগণের প্রত্যক্ষ ম্যান্ডেট নিতেই এই গণভোটের আয়োজন। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, গণরায়ের ভিত্তিতেই জুলাই সনদকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।