Image description

একসময় চুয়াডাঙ্গা জেলার দুটি সংসদীয় আসন বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত থাকলেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাল্টে গেছে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ। মাঠপর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর মানবিক কার্যক্রম ও শক্তিশালী অবস্থানের বিপরীতে বিএনপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও সমালোচনা থাকায় ভোটের মাঠে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চুয়াডাঙ্গা-১ ও চুয়াডাঙ্গা-২ উভয় আসনেই এবার বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন সাধারণ ভোটার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজ নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জোরেশোরে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা-১ আসনটি বিএনপির দখলে থাকলেও ২০০৮ সালের পর থেকে এটি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জেলা নির্বাচন অফিসের ঘোষিত চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, এ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৭ হাজার ৪৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫১ হাজার ৯৭১ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৫৫ হাজার ৫০৩ জন।

এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা সেক্রেটারি মো. শরীফুজ্জামান শরীফ। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে জহুরুল ইসলাম, এনসিপি থেকে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব মোল্লা ফারুক এহসান এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) থেকে কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তৌহিদ হোসেনের নাম আলোচনায় রয়েছে।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বিষয়ে বিএনপির মো. শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘নির্বাচিত হলে চুয়াডাঙ্গা শহরে বাইপাস সড়ক, আলমডাঙ্গায় বড় হাসপাতাল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন এবং শিল্পকারখানা গড়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব।’

অন্যদিকে জামায়াত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর মানুষ একটি সন্ত্রাসমুক্ত ও স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এই তিন খাতে ন্যায়ভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

চুয়াডাঙ্গা-২ এই আসনে ১৯৯১ সালে জামায়াতের প্রার্থী হাবিবুর রহমান এবং ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী হাজী মো. মোজাম্মেল হক জয়ী হন। ২০০৮ সাল থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও এবার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ১৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩১ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৪৩ হাজার ১৬৩ জন।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা সভাপতি ও বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামান সজীব এবং জেএসডি থেকে শেখ সেলিম আলোচনায় রয়েছেন।

ব্যবসায়ী নেতা হওয়ায় মাহমুদ হাসান খান বাবুর এলাকায় যাতায়াত তুলনামূলক কম থাকলেও ভোট সামনে রেখে তিনি ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘জেলার উন্নয়নে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং প্রতিটি উপজেলার ৫০ শয্যার হাসপাতালকে ২০০ শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বেকারত্ব দূরীকরণে দলীয় কর্মসূচির আলোকে কাজ করা হবে।’

বিপরীতে জামায়াত প্রার্থী রুহুল আমিন দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় সক্রিয় থাকায় ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে নির্যাতিত মানুষের পাশে থেকেছি। নির্বাচনের জন্য আমরা সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। আমাদের প্রত্যাশা, এবারের নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।’