জকসু নির্বাচন: প্রচারণায় মুখর ক্যাম্পাস, প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি প্রার্থীদের
প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫। ঐতিহাসিক এই নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতে সরগরম হয়ে উঠেছে জবি প্রাঙ্গণ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে মোট চারটি প্যানেল এবং বিভিন্ন পদে অর্ধশতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্যানেলগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ‘মওলানা ভাসানী বিগ্রেড’, ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’, ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ এবং ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এছাড়া হল সংসদে ‘রোকেয়া পর্ষদ’ নামে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গত ১১ ডিসেম্বর প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সংসদের ২১টি পদের বিপরীতে লড়ছেন ১৫৬ জন প্রার্থী। হল সংসদের ১৫টি পদের জন্যও চলছে জোর লড়াই। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় জকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৭২৫ জন।
গত ৫ নভেম্বর ঘোষিত প্রথম তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে ভূমিকম্প আতঙ্কের কারণে শিক্ষার্থী ও প্যানেলগুলোর দাবির মুখে গত ২৩ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটি এবং ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর ফলে নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়। গত ৪ ডিসেম্বর ঘোষিত নতুন তফসিল অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১৩ দিন চলবে নির্বাচনী প্রচারণা। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং ৩০ অথবা ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করা, দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যার সমাধান, গবেষণা খাতের উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। একইসঙ্গে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া, আন্তর্জাতিক মানের সিলেবাস প্রণয়ন এবং জকসু নির্বাচনকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার করছেন তারা।
‘মওলানা ভাসানী বিগ্রেড’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী ইভান তাহসীব বলেন, “প্রথম দিনের প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। প্রশাসনের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।” তিনি আরও জানান, তাদের ইশতেহারে জকসুকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা, ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করা, ক্যান্টিনে খাবারের মান উন্নত করে তিন বেলা মিল চালু করা, প্রতিটি বিভাগের সেমিনারে প্রয়োজনীয় বই নিশ্চিত করা এবং বিভাগভিত্তিক বাজেট বৈষম্য দূর করার সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে।
‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী বি এম আতিকুর রহমান তানজিল বলেন, “শিক্ষার্থীরা আমাদের সাদরে গ্রহণ করছে। অতীতে যেমন শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও তেমনই থাকব। জবিয়ানদের প্রতিটি সংকট নিরসনে আমরা কাজ করে যাব।” তিনি আধুনিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মাণকে তাদের মূল লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী কিশোয়ার আনজুম সাম্য বলেন, “আমরা গতানুগতিক প্রতিশ্রুতি নয়, বরং সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা দিচ্ছি। এর মধ্যে রয়েছে ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিক কোলাবোরেশন, আন্তর্জাতিক মানের সিলেবাস প্রণয়ন, শিক্ষার্থীদের জন্য ইনস্যুরেন্স ব্যবস্থা চালু করা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি সমন্বিত অ্যাপ তৈরি।”
‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ও ক্যাম্পাসে সুশিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের প্যানেল কাজ করবে।”
দলীয় বা প্যানেলভিত্তিক প্রচারণার বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী মো. রাকিব হাসান জানান, প্যানেল না থাকায় তাকে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, “ব্যালট হাতে পেলে ইশতেহারসহ আমার কর্মপরিকল্পনা লিখিত আকারে সহজেই সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু ব্যালট না পাওয়া এবং পরিচিত মুখ না হওয়ায় বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের কাছে প্রচারণা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”
তিনি আরও মন্তব্য করেন, ব্যালট হাতে থাকলে প্রচারণা অনেকটাই সহজ হতো। তবুও এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে তিনি এককভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।




Comments