Image description

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সোহাসা গ্রামের মৃত আকাব আলীর মেয়ে অনামিকার জীবনের গল্প যেন তার নামের মতোই অনন্য। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন চিকিৎসক হওয়ার—কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর আঘাতে সেই পথটা হয়ে ওঠে আরও কঠিন, আরও পাথুরে। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় মাকে হারিয়ে নিঃস্ব ও একা হয়ে পড়ে অনামিকা। মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসা তখনো তার মনে তাজা—সেই সময়েই প্রথমবার বোঝেন, জীবন কত নির্মম হতে পারে।

তবু তিনি ভাঙেননি। স্কুল-কলেজের বইয়ের ভাঁজে, প্রতিদিনের ক্লান্তিকর পথচলায়, স্বপ্নের পেছনে দৌঁড়ানোয় জায়গা ছিল না হাল ছেড়ে দেওয়ার। মাকে হারানোর শোক সামলে যখন সামনের পথে এগোতে শুরু করেছেন, ঠিক তখনই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় বাবার মৃত্যু যেন আরেকবার পথ রুদ্ধ করে দেয়। একদিকে স্বপ্নের চাপ, অন্যদিকে সবচেয়ে আপনজনদের হারানোর বেদনা দু’দিকেই টান ছিল বেদনা আর অশ্রুর।

কিন্তু অনামিকা শোককে দুর্বলতা নয়, শক্তি হিসেবে নিয়েছেন। বাবার-মায়ের স্বপ্ন পূরণে দমে যাননি তিনি। বড় বোন, বড় ভাই আর মামার অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা তাকে আবারও দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। তাদের উৎসাহ আর বিশ্বাসই ছিল অনামিকার আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি।

আর সেই সাহস নিয়েই অবশেষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা (এমবিবিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। এটি শুধু একটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া নয়। এটি একজন এতিম কন্যার জীবনে আলো ছড়ানোর মুহূর্ত, যা বদলগাছীর মানুষের মুখে এনে দিয়েছে গর্ব ও অনুপ্রেরণা।

অনামিকা ছোট বেলা থেকেই ছিলো খুব মেধাবী ও পরিশ্রমী মেয়ে। জেএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। লাবণ্য প্রভা বালিকা ও কমিউনিটি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। রাজশাহী সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিও ৫ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রতিবেশীরা জানান, “সে এতিম মেয়ে। পড়াশুনা ছাড়া সে কিছুই বোঝে না। মেয়েটা ডাক্তার হয়ে এলাকার মূখ উজ্জ্বল করুক,এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।”

লাবণ্য প্রভা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন,“ বাবা মা কে হারিয়ে তার সাফল্যের পথ অনেক কঠিন হয়েছিলো। আমরা ভেবেছি হয়তো ছিটকে পড়বে। কিন্তু শোক কে শক্তি বানিয়ে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে আমরা আনন্দিত। সে যেন দেশের মঙ্গল বয়ে আনতে পারে।”

অনামিকার সাথে কথা হলে তিনি জানান,“ বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিলো তারা আমাকে ডাক্তার বানাবে। তাদের মৃত্যু আমার হাতে নেই। কিন্তু তাদের স্বপ্ন পূরণ আমার হাতে আছে। আমি শুধু সেই কাজটি করেছি। তবে আমার ভাই,বোন,মামা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য সহযোগিতা না করলে মনোবল ভেঙ্গে যেত। দোয়া করবেন গ্রামের মানুষদের জন্য অনেক কিছু করার ইচ্ছা আছে।”

তবে পথ এখানেই শেষ নয়। চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্য পূরণ করতে তাকে লড়তে হবে আরও কয়েক বছর। তবে অনামিকার চোখে এখন আত্মবিশ্বাসের আলোর ঝিলিক। বাবা-মায়ের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করাই তার প্রেরণা।