শনি গ্রহের বৃহত্তম উপগ্রহ টাইটানের হিমশীতল পৃষ্ঠের নিচে গলিত বরফ বা তরল পানির অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকদের সঙ্গে যৌথ এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে, যা টাইটানে প্রাণের বিকাশের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, টাইটানের উপরিভাগের শক্ত বরফের স্তরের নিচে কর্দমাক্ত বা ‘থকথকে’ পানির সুড়ঙ্গ রয়েছে। সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো, এই স্তরের ভেতরের পানির তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট), যা পৃথিবীর সাধারণ কক্ষ তাপমাত্রার কাছাকাছি। এই নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রা অণুজীব বা প্রাণের বিকাশের জন্য অত্যন্ত উপযোগী বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, টাইটানের পুরু বরফের স্তরের নিচে পৃথিবীর মতো গভীর ও উন্মুক্ত তরল সমুদ্র রয়েছে। তবে নাসার ক্যাসিনি মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানী ব্যাপটিস্ট জার্নো জানিয়েছেন, টাইটানের অভ্যন্তরীণ গঠন সম্ভবত পুরোপুরি তরল নয়। এটি অনেকটা আঠালো বা থকথকে বরফ মিশ্রিত জলস্তরের মতো, যা পৃথিবীর আর্কটিক সাগরের বরফ অথবা ভূগর্ভস্থ জলস্তরের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।
নাসার ক্যাসিনি মহাকাশযান প্রায় ২০ বছর ধরে শনি ও এর উপগ্রহগুলো পর্যবেক্ষণ করার পর ২০১৭ সালে ধ্বংস হয়ে যায়। তবে ক্যাসিনির সংগ্রহ করা তথ্যগুলো আজও বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন রহস্য উন্মোচনে সহায়তা করছে। শনির শক্তিশালী অভিকর্ষণ টানের প্রভাব বিশ্লেষণ করেই মূলত টাইটানের অভ্যন্তরে এই থকথকে বরফস্তরের প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা।
টাইটানের এই রহস্যময় পরিবেশে সত্যিই প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, তা যাচাই করতে নাসা এখন তাদের পরবর্তী বড় মিশন ‘ড্রাগনফ্লাই’-এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই ড্রোন-সদৃশ মহাকাশযানটি ২০২৮ সালের জুলাই মাসে উৎক্ষেপণ করার কথা রয়েছে। ২০৩৪ সালে এটি টাইটানের পৃষ্ঠে অবতরণ করবে এবং সরাসরি তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে মহাকাশ বিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।




Comments