Image description

পৌষের শুরুতেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশ, বাতাস ও জনপদ যেন এক গভীর নীরবতায় ঢেকে গেছে। ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল হাওয়ার দাপটে খুলনার পাইকগাছাসহ উপকূলঘেঁষা নিম্নাঞ্চলের মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে। প্রকৃতি এখানে শুধু দৃশ্যপট বদলায়নি, বদলে দিয়েছে মানুষের প্রতিদিনের চলার গতি, জীবনের ছন্দ।

সন্ধ্যা নামার আগেই চারপাশ ঢেকে যায় ধূসর কুয়াশার চাদরে। নদী-খাল, ধানক্ষেত, খোলা মাঠ—সবকিছু কুয়াশার আড়ালে মিলিয়ে যায়। রাত যত গভীর হয়, শীতের তীব্রতা তত বাড়ে। ভোরের দিকে কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই বেড়ে যায় যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরতে দেখা যায়। সকাল ১১টার আগে সূর্যের দেখা মেলে না, আর মিললেও তাতে নেই উষ্ণতার স্পর্শ।

এই আবহাওয়ার সরাসরি প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। পাইকগাছা পৌর এলাকা, কপিলমুনি, গদাইপুর, আগড়ঘাটা, চাঁদখালি ও গড়ইখালীসহ আশপাশের জনপদগুলো সন্ধ্যার পরপরই জনশূন্য হয়ে পড়ে। সড়ক ও বাজারে নেমে আসে নীরবতা। কুয়াশার কারণে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে যানবাহন, জ্বালাতে হচ্ছে হেডলাইট—ফলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বাড়ছে ভোগান্তি।

শীতের এই কনকনে ঠাণ্ডা সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। দিনমজুর, ভ্যানচালক, চা-দোকানি ও ফেরিওয়ালারা পড়েছেন জীবিকা সংকটে। ঠাণ্ডার ভয়ে মানুষ ঘরবন্দি থাকায় তাদের আয় কমে গেছে। অথচ কাজ বন্ধ রাখলে সংসার চালানো কঠিন। শীতের সঙ্গে তাই প্রতিদিন লড়াই করে চলেছেন তারা।

শীত বেড়েছে, সঙ্গে বেড়েছে গরম কাপড়ের চাহিদা। শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়লেও দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য তা হয়ে উঠছে বোঝা। অনেকেই পুরোনো শীতবস্ত্রেই দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।

প্রকৃতির এই প্রতিকূলতায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরাও। দীর্ঘস্থায়ী শীত ও ঘন কুয়াশায় বোরো মৌসুমের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে ঠাণ্ডাজনিত রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে, যা স্বাস্থ্যখাতের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সব মিলিয়ে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ এখন কুয়াশা আর কনকনে শীতের কঠিন পরীক্ষার মুখে। 

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানবিক সহায়তা। দ্রুত শীতবস্ত্র বিতরণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদার এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।