Image description

দাম বাড়ার ঘোষণার পরপরই রাজশাহীতে রান্নার জন্য ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা, খুচরা গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতা ও পরিবেশকরা।

খুচরা গ্যাস বিক্রেতা ও পরিবেশকদের ভাষ্য, বসুন্ধরা গ্যাসের সিলিন্ডার গত এক মাস যাবত ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে, অন্যান্য এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারও দাম বৃদ্ধির পর থেকে গত পাঁচ দিন যাবত তারা ঠিক মতো পাচ্ছেন না। তিন থেকে চার দিন আগে গাড়ি পাঠানোর পরও মিলছে না গ্যাস। তাঁদের অনেকেরই দাবি- গুদামে এখন খালি সিলিন্ডার পড়ে আছে।


গতকাল বৃহস্পতিবার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর থেকেই রাজশাহী নগরে সিলিন্ডারের সংকট আরও বেশি দেখা দিয়েছি ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান।

জানা গেছে, দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম একলাফে ২৬৬ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা, যা জানুয়ারি মাসে ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিইআরসির পক্ষ থেকে নতুন দর জানানো হয়। সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। তবে তা সব জায়গায় কার্যকর হতে দেখা যায় না। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অভিযোগ জানাতে বলা হয়। বিইআরসি জানিয়েছে, ঘোষিত নতুন দর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হয়েছে। এর আগে জানুয়ারি মাসের ক্ষেত্রে দর ১২ কেজির সিলিন্ডারে ৬৫ টাকা কমানো হয়েছিল।

আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের গৌরহাঙ্গা এলাকার পরিবেশক মেসার্স আনন্দ কুমার সাহার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ব্যবস্থাপক সজীবের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, তাঁরা ওমেরা কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করেন। প্রতি মাসে তাঁদের প্রায় ১৫ হাজার গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা থাকে। চার দিন আগে গাড়ি পাঠিয়েছেন, সেই গাড়ি আসেনি। ঘরে সব খালি সিলিন্ডার পড়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে অভিযান চালিয়ে বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করার অভিযোগে তাঁদের ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে তাঁরা আর ব্যবসা করতে পারবেন না। দাম বাড়ানো হচ্ছে। তাঁরা দাম না বাড়িয়ে তো আর বিক্রি করতে পারবেন না।

নগরে কাদিরগঞ্জ এলাকায় যমুনা ও লাভ কোম্পানির গ্যাসের পরিবেশক মেসার্স হালিমা এজেন্সির কার্যালয়। এই পরিবেশকের ব্যবস্থাপক আবদুর রহিম বলেন, তাঁদের প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার গ্যাসের সিলিন্ডারের চাহিদা রয়েছে। তাঁরা দুই দিন পরপর একটি করে গাড়ি পাঠিয়ে থাকেন। তাতে ৬১৬টি সিলিন্ডার আসে। এখন তাঁদের বলা হচ্ছে, ‘তিন থেকে চার দিন পর গাড়িতে ২০০ সিলিন্ডার দেওয়া হবে। নিলে নাও, না নিলে যাও।’

আবদুর রহিম আরও বলেন, এখন তাঁরা গ্রাহককে চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করতে পারছেন না। অনেক গ্রাহক ফিরে যাচ্ছেন।

রাজশাহী নগরের আহমদপুর এলাকায় অগ্নি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক শামীমা সুলতানা বলেন, তাঁর প্রায় দুই হাজার গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা আছে। তাঁকে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ সিলিন্ডার দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, জানুয়ারি মাসটা তাঁদের খুব ভোগান্তি হয়েছে। একটা সিলিন্ডার থেকে তাঁর ৮ থেকে ১০ টাকা লাভ হয়। এখন একসঙ্গে ২৬৬ টাকা বাড়ালে লাভটা যোগ করার আর জায়গা থাকছে না। এতবার দাম কমানো-বাড়ানো নিয়ে তাঁরা গ্রাহকের কাছে চরমভাবে অপমানিত হচ্ছেন।

এদিকে, গ্যাসের দাম ভোক্তা পর্যায়ে যেনো বৃদ্ধি না পায় সে লক্ষ্যে কাজ করছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এনিয়ে গত বৃহস্পতিবার  মহানগরীর তিনটি প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত মূল্যের বেশি দাম নেওয়ায় ও মূল্য তালিকা দোকানে না থাকায় তিন প্রতিষ্ঠানকে মোট ৫২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডারের দাম নিয়ে কেউ যেনো হয়রানি না করতে পারে এজন্য এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর।