Image description

দারিদ্র্যপীড়িত জেলা কুড়িগ্রামে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চালু করা হয়েছে এক টাকার রেস্টুরেন্ট। এক টাকায় শহরের রেস্টুরেন্টের খাবার পেয়ে খুশি হতদরিদ্র মানুষ। 
বাজারে এক টাকা এখন নেহায়েৎ মূল্যহীন। দোকানিরা এর চাহিদা সারেন চকলেট দিয়েই। কিন্তু এক টাকায় রেস্টুরেন্টের খাবার পাওয়া যা-এটি অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য। কিন্তু এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। দারিদ্র্যপীড়িত কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চরসুভারকুঠি গ্রামে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্থায়ীভাবে বিশেষ একটি রেস্টুরেন্ট চালু হয়েছে। এক টাকার এই রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় বিরায়ানি, পোলাও, ভাত, মাছ, মাংস ও ডিমসহ ১২ পদের খাবার। ক্ষুধার্ত মানুষ রেস্টুরেন্টে গিয়ে ইচ্ছেমতো তাদের পছন্দের খাবার এক টাকায় খেতে পারেন।
মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসে তৃপ্তি সহকারে পছন্দের খাবার খেতে পেরে খুশি সুবিধাভোগীরা। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির বাজারে অনেক অসহায়, দরিদ্র ও গৃহহীন মানুষের তিনবেলা খাওয়া কষ্টকর। কিন্তু এক টাকার বিনিময়ে পেট ভরে খেতে পেরে খুশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদিরদ্র মানুষ। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের আধুনিক ঘরানার এই রেস্টুরেন্ট নিশ্চিত করেছে খাবার খাওয়ার এক মনোরম এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের, যেখানে রয়েছে পেশাদার বাবুর্চি, রেস্টুরেন্ট স্টাফ, মেন্যু কার্ড ও বাহারি সব পুষ্টিকর খাবার। রেস্টুরেন্টটিতে একসঙ্গে বসে ৫০ জন মানুষ খেতে পারে। আর এক দিনে ৫ শতাধিক মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়। বিনা পয়সায় না খেয়ে টাকার বিনিময়ে খেতে পেরে আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মতৃপ্ত হাসি বড় পাওয়া। বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন এই রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চলে।
 তবে এই কাজে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে প্রতিদিন এই রেস্টুরেন্ট চালানো সম্ভব। ঢাকা ও কক্সবাজারের পর কুড়িগ্রামে চালু হলো এক টাকার এই রেস্টুরেন্ট। সুবিধাভোগী ছকিনা বেগম বলেন, ‘এক টাকার রেস্টুরেন্টে নাতি-নাতনি, বিয়াইন ও বোনসহ আসছি। হামরা গ্রামের মানুষ কোনো দিন চিন্তা করতে পারি নাই যে রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খামো। আজকে এক টাকায় পেট ভরে খেতে পেরে সবাই খুশি হয়েছে।’  
সুবিধাভোগী সত্তরোর্ধ্ব কাশেম আলী বলেন, ‘বাবা মোর বয়স মেলা হইছে। কোনো দিন টাকার অভাবে বড় বড় হোটেলে খাবার খেতে পারি নাই। চা-বিস্কুট ৫ টাকা দিয়ে খাইছি। এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সেটাও হয় না। কিন্তু বউসহ এসে এক টাকায় এমন দামি খাবার খেতে পারব ভাবতেই পারিনি। এক টাকায় মনমতো খেতে পেরে খুব খুশি হয়েছি বাবা।’  সুবিধাভোগী বুলবুলি আক্তার বলেন, ‘বাচ্চা নিয়ে এসেছি এক টাকার হোটেলে। ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, সালাদ, ফল ও মিষ্টি খেলাম। কামলা দেওয়া সংসারে শহরের হোটেলে গেলে কম করে হলেও ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হতো। কিন্তু এখানে এক টাকায় খেতে পেরে স্বপ্নই মনে হচ্ছে।’ 
স্বেচ্ছাসেবক হৃদয় বলেন, ‘আজ জীবনে প্রথমবারের মতো রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করছি। সেটিও বিনা পয়সায়। এতে করে উপলদ্ধি করতে পারছি... হোটেলের ওয়েটার ও বাবুর্চিসহ কর্মচারীদের ঘাম ঝরানো শ্রমের মূল্য। সত্যি আমি বেশ গর্বিত, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের জন্য এমন কষ্ট করতে পেরে।’ 
স্বেচ্ছাসেবক প্রধান আকরম হোসেন বলেন, ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা নিজেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরিদ্র, এতিম ও অসহায়দের খুঁজে বের করে তাদের টোকেন দেন। পরে তারা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সুবিধা নেন।’ 
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সালমান খান ইয়াছিন বলেন, ‘বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন এই রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চলছে। তবে এই কাজে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে প্রতিদিন করার পরিকল্পনা আছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ মানুষকে এই রেস্টুরেন্ট থেকে সেবা দেওয়া সম্ভব। কুড়িগ্রামে এই রেস্টুরেন্ট একটি মডেল মাত্র। দেশের বিভিন্ন দরিদ্র এলাকায় এই ধরনের কার্যক্রম চালু করা গেলে মানুষ ক্ষুধার কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে। পাশাপাশি পুষ্টির অভাবজনিত রোগ থেকেও মুক্তি মিলবে অভাবী মানুষের।