Image description

বদলে যাওয়া বিজ্ঞান, বদলে যাওয়া পৃথিবী। আমাদের চারপাশের সবকিছুই দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, আর এর সাথে আমাদের চিন্তাভাবনা ও কৌতূহলও নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। এমনই একটি কৌতূহলের বিষয় হলো ভিনগ্রহের প্রাণী বা এলিয়েনদের অস্তিত্ব। যুগ যুগ ধরে মানুষ রাতের আকাশে তাকিয়ে প্রশ্ন করেছে – আমরা কি একা? এই মহাবিশ্বে কি আমাদের মতো আরও বুদ্ধিমান প্রাণী আছে?

ইসলাম ধর্ম ১৪০০ বছর ধরে মানুষের জীবন চলার পথ দেখাচ্ছে। কোরআন ও হাদিসে এমন অনেক বিষয় আছে যা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মিলে যায়, আবার কিছু বিষয় আছে যা আমাদের চিন্তাভাবনার খোরাক যোগায়। তাহলে, এলিয়েনদের অস্তিত্ব সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

কোরআনের আলোকে ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্বের ইঙ্গিত
কোরআনে সরাসরি "এলিয়েন" বা "ভিনগ্রহের প্রাণী" শব্দগুলো উল্লেখ নেই। তবে এমন কিছু আয়াত আছে যা নিয়ে গবেষকরা নানাভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং মহাবিশ্বে অন্য প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা তুলে ধরে।

'রাব্বুল আলামীন' – সকল জগতের প্রতিপালক
কোরআনের সূরা ফাতিহার দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ নিজেকে 'রাব্বুল আলামীন' বা 'সকল জগতের প্রতিপালক' হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। 'আলামীন' শব্দটি 'আলাম' (জগৎ) এর বহুবচন। এই 'জগৎ' বলতে কি শুধু পৃথিবী নয়, বরং একাধিক জগৎকে বোঝায়? এটি কি শুধু সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের জগৎ, নাকি এর বাইরেও অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণের জগৎ? এই প্রশ্নটি আমাদের ভাবিয়ে তোলে।

আকাশ ও পৃথিবীতে জীবজন্তু ছড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা
সূরা শুরা'র ২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন: "আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এ দুইয়ের মধ্যে তিনি যে সব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন।" এই 'আকাশ' বলতে কি শুধু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বোঝানো হয়েছে, নাকি এর বাইরেও বিস্তৃত মহাবিশ্বের কথা বলা হয়েছে? যদি মহাবিশ্বের কথা বোঝানো হয়, তাহলে এর মধ্যে অন্য গ্রহে প্রাণীর অস্তিত্বের ইঙ্গিত থাকতে পারে।

আসমান ও যমিনের মধ্যবর্তী সব কিছুর সৃষ্টি
সূরা কাফের ৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: "তিনি আসমান ও যমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন।" এই আয়াতেও আসমান ও যমিনের মধ্যবর্তী সব কিছুর কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে আমরা যা জানি, তার বাইরেও অনেক কিছু থাকতে পারে।

এলিয়েনদের সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদদের মতামত
বেশিরভাগ ইসলামী চিন্তাবিদ মনে করেন, কোরআনের এই আয়াতগুলো থেকে সরাসরি এলিয়েনদের অস্তিত্ব প্রমাণ করা কঠিন। তবে এর মানে এই নয় যে, তারা এলিয়েনদের অস্তিত্বকে পুরোপুরি অস্বীকার করেন। তারা বলেন, আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তিনি যদি অন্য কোনো গ্রহে প্রাণী সৃষ্টি করে থাকেন, তবে তা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

কিছু চিন্তাবিদ যুক্তি দেন যে, মহাবিশ্ব এত বিশাল এবং এতে এত গ্যালাক্সি ও নক্ষত্র রয়েছে, যা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। এমন একটি বিশাল মহাবিশ্বে শুধু পৃথিবীতেই প্রাণের অস্তিত্ব থাকবে, এটা যৌক্তিক মনে হয় না। আল্লাহর ক্ষমতা অসীম, তাই তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রাণী সৃষ্টি করতে পারেন।

এলিয়েনদের সাথে যোগাযোগের সম্ভাবনা!
যদি অন্য গ্রহে সত্যিই বুদ্ধিমান প্রাণী থাকে, তাহলে তাদের সাথে যোগাযোগের বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ইসলামে বলা হয়েছে, আল্লাহ প্রত্যেক জাতির কাছে নবী-রসূল পাঠিয়েছেন। তাহলে, যদি অন্য গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকে, তাদের কাছেও কি নবী-রসূল পাঠানো হয়েছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কোরআনে সরাসরি পাওয়া যায় না, তবে এর ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে।

এলিয়েনদের অস্তিত্ব সম্পর্কে ইসলামে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই। তবে কোরআনের কিছু আয়াত থেকে এর সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আধুনিক বিজ্ঞানও প্রতিনিয়ত মহাবিশ্বের নতুন নতুন রহস্য উন্মোচন করছে। হয়তো একদিন বিজ্ঞান ও ধর্ম উভয়ই এলিয়েনদের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, এই বিশাল মহাবিশ্ব আল্লাহর অসীম কুদরতের এক বিস্ময়কর নিদর্শন। আমরা একা থাকি বা না থাকি, আল্লাহর সৃষ্টি রহস্যময় এবং তার জ্ঞান আমাদের কল্পনারও বাইরে।