Image description

বেনাপোল স্থলবন্দরের বাইপাস সড়কে বিজিবি কর্তৃক আড়াই কোটি টাকার কাগজপত্রবিহীন ভারতীয় পণ্য জব্দের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বেনাপোল বন্দরের পরিচালক মো. শামীম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে শুল্ক ফাঁকির সঙ্গে জড়িতদের এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, বিজিবির পণ্য আটকের একদিন পর, অর্থাৎ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে গোয়েন্দা সংস্থা ভারতীয় পণ্যবোঝাই ইউ-২৪৮২ নম্বরের একটি কাভার্ডভ্যান ট্রাক আটক করেছে।

পণ্য জব্দের বিবরণ

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে বেনাপোল বন্দর এলাকা থেকে একটি ভারতীয় ট্রাকের পণ্য গোপনে বাংলাদেশি ট্রাকে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকাগামী ঢাকা মেট্রো-ট-২২-৭৫৬৬ নম্বরের ট্রাকটি বাইপাস সড়ক থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি আটক করে। বেনাপোল বিজিবি ক্যাম্পে ট্রাকটি তল্লাশি করে জব্দ করা হয় নিম্নলিখিত পণ্য: ১ হাজার ৪৭৬ পিস শাড়ি, ২১৫ পিস থ্রি-পিস, মোটরসাইকেলের ২টি টায়ার, ১০ হাজার ৬৯৩ পিস ওষুধ, ৭৪ হাজার ৪৫৫ পিস কসমেটিক্স ক্রিম, একটি কাভার্ডভ্যান ট্রাক। এসব পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার ৯৩০ টাকা।

তদন্ত কমিটি ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ

বন্দর পরিচালক মো. শামীম হোসেন জানান, রাতের আঁধারে সিসি ক্যামেরার নজরদারির বাইরে পণ্য খালাস করা হয়েছিল। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি ট্রাকটি আটক করে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর জড়িতদের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, শুল্ক ফাঁকির সিন্ডিকেটের কারণে প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

বুধবার রাতে বেনাপোল কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনালে কাগজপত্রবিহীন ইউ-২৪৮২ নম্বরের আরেকটি কাভার্ডভ্যান ট্রাক আটক করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাকটিতে বডি স্প্রের আড়ালে উচ্চ শুল্কযুক্ত ফ্যাব্রিকসের চালান রয়েছে। কাস্টমস হাউজের তত্ত্বাবধানে ট্রাকটি সিলগালা করে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রোববার বা সোমবার ট্রাকটি খুলে ইনভেন্টরি করা হতে পারে। এ ঘটনায় জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বন্দরে সংস্কারের উদ্যোগ

গত ৪ ফেব্রুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শামীম হোসেন বেনাপোল বন্দরের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বন্দরের অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। গত ৭ এপ্রিল পণ্য (ফ্যাব্রিকস) চুরির অভিযোগে ট্রাফিক পরিদর্শক মো. হারুন অর রশিদ ও ওয়্যারহাউস সুপারিনটেনডেন্ট শিহাব আহমেদ মামুনকে বদলি করা হয়। এছাড়া, ট্রাকচালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে ৬৫ জন আনসার সদস্যকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। বন্দরে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ

বন্দরের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল বন্দরে শুল্ক ফাঁকির একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা বন্দর, কাস্টমস ও আনসারের কিছু অসাধু সদস্যকে ম্যানেজ করে পণ্য পাচার করে আসছে। ব্যবসায়ীদের মতে, শুধু বদলি করে এই অপকর্ম বন্ধ করা সম্ভব নয়। জড়িতদের ফৌজদারি আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করলেই এই অপকর্ম বন্ধ হবে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।