Image description

সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক মাঠ এখন উত্তপ্ত। ভোটের আগেই ইউনিয়ন, গ্রাম থেকে পাড়া-মহল্লায় বইছে নির্বাচনী হাওয়া। প্রবাসী অধ্যুষিত ও গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ এই আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া অন্তত ১০ জন নেতা। তবে, প্রার্থী বাছাইয়ে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তহীনতায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা পড়েছেন বিড়ম্বনায়।

প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপে উত্তপ্ত নির্বাচনী মাঠ

বিএনপির নেতারা এখন মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। বড় বড় শোডাউন, মিছিল, মিটিংয়ের মাধ্যমে নিজ নিজ কর্মী বলয়ের কাছে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। চায়ের দোকান থেকে রাজনৈতিক অন্দরমহল—সর্বত্রই এখন আলোচনার কেন্দ্রে কে পাবেন বিএনপির মনোনয়ন। এবারের নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকায় প্রার্থীরা কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড সাঁটিয়ে এবং রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আয়োজনে অংশ নিয়ে তারা জোরালো গণসংযোগ চালাচ্ছেন।

প্রার্থী আধিক্যে তৃণমূলে বিশৃঙ্খলা

একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভোটারদের কাছে যেতে বেশ বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দলের প্রার্থী কে হবেন, তা পরিষ্কার না থাকায় কর্মীরা দ্বিধায় পড়েছেন। একদিন এক প্রার্থী, পরদিন আরেকজন—একই ভোটারের কাছে একাধিক প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে নেতাকর্মীরা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন। দলের হাইকমান্ড প্রার্থী চূড়ান্ত না করায় এই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, তৃণমূলে দলীয় অবস্থানহীন নেতা ও প্রবাসী নেতাদের সমর্থনে একেক দিন একেক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন কর্মীরা। তবে, এই প্রচারণা তৃণমূলকে উজ্জীবিত রাখলেও প্রার্থী বিড়ম্বনা কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে।

হেভিওয়েট প্রার্থীদের তৎপরতা

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম। স্বৈরাচারী আমলে পুলিশি হেনস্তার মুখে কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তিনি বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। এছাড়া, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীও তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতায় এগিয়ে রয়েছেন। তিনি নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে ফয়সল চৌধুরী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে এক লাখের বেশি ভোট পেয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন। এবারও তিনি মনোনয়নের আশায় মাঠে সক্রিয়। এছাড়া, যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে আসা বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরীও হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আস্থাভাজন এই নেতা মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে।

অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম কমর উদ্দিনের মেয়ে সাবিনা খান পপি, সাবেক সংসদ সদস্য ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়ার মেয়ে সৈয়দা আদিবা হোসেন, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক চিত্রনায়ক হেলাল খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স উপদেষ্টা অহিদ আহমদ, জেলা বিএনপির সহশিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক তামিম ইয়াহইয়া হক এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন।

আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি, জামায়াতের চ্যালেঞ্জ

৫ আগস্টের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত থাকায় তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। এতে বিএনপির শক্তিশালী ভোট ব্যাংক নির্ভার থাকলেও প্রার্থী আধিক্যে দলের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, জামায়াতে ইসলামী এই আসনে কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি ইতিমধ্যে এলাকায় যাতায়াত বাড়িয়েছেন। এছাড়া, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরাও নিজ নিজ দলের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী এড. জাহিদুর রহমানও মাঠে সক্রিয়।

তৃণমূলের দাবি: দ্রুত প্রার্থী ঘোষণা

বিয়ানীবাজার বিএনপির সভাপতি এডভোকেট আহমদ রেজা ও সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন বলেন, “নেতাকর্মীরা দ্রুত প্রার্থী ঘোষণার অপেক্ষায়। এটি দলের ঐক্য ও প্রচারণাকে আরও গতিশীল করবে।” তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা ও নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে প্রার্থী বাছাইয়ে তরুণ প্রজন্মের মতামতকেও গুরুত্ব দেবে বিএনপি।

ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান

দলীয় সূত্র জানায়, হেভিওয়েট প্রার্থীদের কেউ কেউ মনোনয়ন না পেলেও তাদের অন্যভাবে মূল্যায়ন করা হতে পারে। স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে, যা দলের শক্তি প্রদর্শনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তবে, প্রার্থী বাছাইয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে তৃণমূলের বিভক্তি আরও গভীর হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।