Image description

সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যখ্যাত জঙ্গল সলিমপুর, দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসীদের আস্তানা হিসেবে পরিচিত ছিল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় অপরাধীরা একমাত্র স্থান পায় এই অভয়ারণ্যখ্যাত জঙ্গল সলিমপুরে। বিগত দিনে এই অভয়ারণ্য আস্তানাগুলো সরকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। সে মোতাবেক কিছু অবকাঠামো গড়ে উঠেছিল। 

পটপরিবর্তনের পর সরকারের সংশ্লিষ্টরা নানা রকম রাষ্ট্রীয় কাজে জড়িত হয়ে পড়াই ফের এই জঙ্গল সলিমপুর, ছিন্নমূল ও আরেফিন, আলীনগর এলাকাগুলো দখলে মরিয়া হয়ে মরিয়া হয়ে উঠে সঙ্গবদ্ধ অপরাধচক্র গুলো। শুরু হয় আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমূল নিয়ন্ত্রণ করতো রোকন গ্রুপ। আর আরেফিন নগর ও আলীনগর নিয়ন্ত্রণ করতো ইয়াসিন গ্রুপ। সেখানে সাধারণ জনগণ হয়ে পড়ে তাদের কাছে জিম্মি। এই দুর্গম জঙ্গল ছলিমপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তিন থেকে চারটি বাহিনী। যেখানে প্রশাসন ডোকতে ভয় পাই। এই যেন দেশের মধ্যে আরেক দেশ। তাদের চাঁদাবাজি,অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, দখলসহ নানা অপকর্মে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই যুগ ধরে পাহাড় কেটে এখানে গড়ে উঠেছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের অবৈধ বসতি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই এলাকায় এক সন্ত্রসী বাহিনীর নেতৃত্বে সশস্ত্র পাহারায় দিন-রাত পাহাড় কাটা হচ্ছিল। অধিপত্য নিয়ে হয়েছে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা। ওই এলাকায় কেউ যেতে সাহস পায় না। এমনকি প্রশাসনও। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পুরো আওয়ামী লীগের যে সকল গ্রুপর জঙ্গলছলিমপুর পাহাড়ি এলাকা দখলে রেখেছিল তা উন্মুক্ত হয়ে যায়। তারা পাহাড়ি এলাকা ছাড়লেও সম্প্রতি যোগ দেন এক বাহিনীতে। 

সর্বশেষ ৪ অক্টোবর শনিবার ভোর রাত থেকে ইয়াছিন বাহিনীর এলাকায় হানা দেয় রোকন বাহিনী। সংঘর্ষ ও গোলাগুলির এক পর্যায়ে গুলি করে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয় রোকন বাহিনীর সদস্য খলিলুর রহমান কালুকে। আহত হন ২০ থেকে ২৫ জন। এ নিয়ে ১০ মাসে জঙ্গল ছলিমপুরে নিহত হলেন চারজন। তাদের তিনজনই রোকন বাহিনীর সদস্য। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তারা প্রাণ হারান। আরেকজনকে রোকন বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করে বলে জানা গেছে।

শনিবার সকালে জঙ্গল সলিমপুরের পরিস্থিতি নিয়ে চলমান সংঘর্ষ ও দখলবাজির তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ইয়াসিন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা এখন টেলিভিশনের দুই সাংবাদিককে হঠাৎ চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে মারধর করেন। এ সময় তাদের ব্যবহৃত ক্যামেরা ভাঙচুর, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। আহত সাংবাদিকরা হলেন এখন টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান ও বিশেষ প্রতিনিধি হোসাইন জিয়াদ এবং ক্যামেরা পার্সন মো. পারভেজ। হামলার পর আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে চমক হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

এলাকাবাসী জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জঙ্গল ছলিমপুরের অধিকাংশ পাহাড়ি এলাকা দখলে নেন রোকন উদ্দিন। এর পর থেকেই সংঘাত-সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। সব শেষ ৪ অক্টোবর শনিবার ভোর রাত থেকে ইয়াছিন বাহিনীর এলাকায় হানা দেয় রোকন বাহিনী। সংঘর্ষ ও গোলাগুলির এক পর্যায়ে গুলি করে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয় রোকন বাহিনীর সদস্য খলিলুর রহমান কালুকে। আহত হন ২০ থেকে ২৫ জন।এ নিয়ে ১০ মাসে জঙ্গল ছলিমপুরে নিহত হলেন চারজন। তাদের তিনজনই রোকন বাহিনীর সদস্য। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তারা প্রাণ হারান। আরেকজনকে রোকন বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করে বলে জানা গেছে।

এক বাহিনীতে সদস্য সংখ্যা শতাধিক। এর মধ্যে অস্ত্রধারী ৫৫ জনের হাতে রয়েছে ওয়াকিটকি। এর মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে পুরো জঙ্গল ছলিমপুর এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখেন তারা। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা আরেক বাহিনীও। আগে তারাই জঙ্গল ছলিমপুর নিয়ন্ত্রণ করত।

গত ৩০ আগস্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুন্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের ছিন্নমূল এলাকায় সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে একটি দেশীয় অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। ওই কারখানা থেকে ছয়টি দেশীয় অস্ত্র, ৩৫ রাউন্ড খালি কার্তুজ, পাঁচ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, একটি চায়নিজ কুড়াল, ২০টি ছুরি, চার্জারসহ দুটি ওয়াকিটকি, একটি মেগাফোন, চারটি প্যারাসুট ফ্লেয়ারসহ একাধিক অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, জঙ্গল ছলিমপুরে ‘এখন টিভি’র দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু। 

গত মঙ্গলবার সকালে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও চট্টগ্রাম টেলিভিশন রিপোর্টার্স নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদানকালে তিনি এ আশ্বাস দেন।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘ওই এলাকা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে, যা প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সাংবাদিকদের সহযোগিতায় সন্ত্রাসীদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলাম এবং টিভি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।