
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সবুজ মাঠে এখন সিমের দোলা। লতানো গাছে ঝুলছে টাটকা, সাদা-সবুজে মেশানো সিম। শিশির ভেজা সকালে কৃষকের মুখে ফুটছে তৃপ্তির হাসি। উপজেলার চৌমুহনী, জগদীশপুর, নোয়াপাড়া, বাসুরা, আদাঐর, ছাতিয়াইন, আন্দিউড়া, ধর্মঘর ও বহরা ইউনিয়নে শত শত কৃষক এ বছর সিম চাষে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। অনুকূল আবহাওয়া, রোগবালাইয়ের প্রকোপ কম এবং কৃষি বিভাগের পরামর্শে উন্নত জাতের বীজ ব্যবহারের ফলে ফলন ও বাজারদর দুটোই কৃষকের অনুকূলে।
কৃষকের সাফল্যের গল্প
চাষি আব্দুল গফুর জানান, “এবার সিমের ফলন দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। গত বছর প্রতি বিঘায় ৬০ মণ ফলন পেয়েছিলাম, এবার ৮৫ থেকে ৯০ মণ পর্যন্ত উঠছে। বাজারে দামও ভালো, কেজি প্রতি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।”
একই এলাকার নারী কৃষক মোছা. রহিমা বেগম বলেন, “আগে ধান চাষ করতাম, লাভ হতো না। এখন সিম চাষে কাজ কম, আয় বেশি। পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে।”
উপজেলার অনেক কৃষক এখন ধান বা আলুর পরিবর্তে আগাম সিম চাষে ঝুঁকছেন। তারা জানান, শীত মৌসুমের আগে আগাম জাতের সিম বাজারে উঠলে দাম বেশি পাওয়া যায়।
বাজারে মাধবপুরের সিমের চাহিদা
মাধবপুর বাজার, শাহজীবাজার ও চৌমুহনী হাটে প্রতিদিন শত শত মণ সিম বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মাধবপুরের সিম শুধু হবিগঞ্জেই নয়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ী মো. আজিজুল হক বলেন, “মাধবপুরের সিমের চাহিদা অনেক। এর টাটকা ও ঝলমলে গুণ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনপ্রিয়। প্রতিদিন ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।”
কৃষি বিভাগের ভূমিকা
মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সজীব সরকার জানান, “এ বছর আগাম সিমের আবাদ হয়েছে ১২ হেক্টর জমিতে। রবি মৌসুমে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে সিম চাষ হবে, যা গত বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তারা এখন সার, পানি ও রোগনাশক ব্যবহারে আরও সচেতন। ফলে ফলন ও গুণগত মান বেড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “সিম এখন মাধবপুরের অন্যতম সম্ভাবনাময় ফসল। আমাদের লক্ষ্য পরবর্তী মৌসুমে এই চাষ আরও বাড়ানো।”
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা
কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এক বিঘা জমিতে সিম চাষে খরচ হয় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারদরে সেই জমি থেকে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। ফলে ধানের তুলনায় সিম চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক প্রশিক্ষণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে মাধবপুরের সিম সারাদেশে একটি ব্র্যান্ড পণ্য হিসেবে পরিচিতি পেতে পারে।
মাধবপুরের সবুজ মাঠে সিম চাষের এই সাফল্য কৃষকদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। এই ফসল এখন শুধু আয়ের উৎস নয়, কৃষি অর্থনীতিতে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক।
Comments