তপ্ত দুপুরে সূর্যের আলো তরমুজ খেতে পড়ে চিকচিক করছে। তরমুজের দিকে তাকাতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। খেতজুড়ে বাঁশের তৈরি মাচা। সেইসব মাচায় ঝুলে আছে ‘‘আস্থা ও সূর্যডিম” জাতের তরমুজ। একটি-দুটি নয়, শত শত তরমুজ। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের খারুয়া বড়াইল গ্রামের খালেদ হাসান দীপুর তরমুজ ক্ষেতের দৃশ্য এখন এমনি। তিনি তাঁর নিজ জমিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবার তরমুজ চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
তরমুজ দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি শরীরের পুষ্টি যোগাতেও সাহায্য করে। গরমের সময় প্রায় সকলেই তরমুজ খেয়ে থাকেন। এছাড়াও তরমুজ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় কার্যকর ওষুধ হিসেবে কাজ করে, কিডনি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে, হার্টকে স্বাস্থ্যকর রাখাসহ তরমুজের রয়েছে অনেক গুণ। বহু গুণের অধিকারী এ তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন খালেদ হাসান দীপু। মাচায় ঝুলছে তাঁর চাষ করা দৃষ্টি নন্দন তরমুজ। এই তরমুজ স্বাদে মিষ্টি ও সুস্বাদু।
বড়াইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সরাসরি খেত থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন। একজন গাছ থেকে তরমুজ ছিঁড়ে দিচ্ছেন তাঁদের। খেতের মাচায় ঝুলছে তরমুজ। সবুজ পাতার মধ্যে যেদিকে চোখ গেছে, শুধু তরমুজ আর তরমুজ ঝুলতে দেখা গেছে।
সেখানেই কথা হয় তরমুজ চাষী খালেদ হাসান দীপুর সঙ্গে। তিনি জানান, ময়মনসিংহ থেকে সংগ্রহ করেন বীজ। এরপর সেখানে বেড তৈরি করে ওপরে বিছিয়ে দিয়েছেন মালচিং পেপার। এর ফাঁকে উৎপাদন করেছেন চারা। এরপর গফরগাঁও কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও সার্বিক সহযোগিতায় তিনি চারা রোপণ করেন। এ পর্যন্ত জমি প্রস্তুত, সার, বীজ, মাচা, সুতা ও জাল বাবদ তাঁর খরচ হয়েছে অন্তত তিন লাখ টাকা। তিনি আশা করছেন, অন্তত ১৪ টন তরমুজ উৎপাদন হবে যা বিক্রি হবে অন্তত ৮ লাখ টাকা। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে সব কাজ করেছেন তিনি। এতে তাঁর উৎপাদন খরচ বেশ সাশ্রয় হয়েছে।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে তিনি তরমুজ বিক্রি করা শুরু করতে পারবেন বলে জানান। এছাড়াও তিনি জানান, খরচ বাদ দিয়ে অন্তত ৫ লাখ টাকা লাভ হবে তাঁর। এবারের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিনে দ্বিগুণ জমিতে তরমুজ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। দীপু জানান, তাঁর দেখাদেখি এখন অনেক চাষি তরমুজ চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। সে জন্য কৃষকরা তাঁর কাছে প্রতিদিনই পরামর্শ নিতে আসছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাকুরা নাম্মী বলেন, "খালেদ হাসান দীপু প্রথমে নিজ উদ্যোগে তরমুজ চাষ করে। ফলনও হয় ভালো। তাঁর আগ্রহ দেখে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় এ বছর দীপুকে ৩ বিঘা জমির ওপর তরমুজ প্রদর্শনী দেওয়া হয়। তিনি ১২০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় তরমুজের আবাদ করেছেন। 'আস্থা' ও 'সূর্যডিম' জাতের এ তরমুজ গফরগাঁও উপজেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা তরমুজের ভালো ফলন দেখে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাঁরা সামনের বছর এ জাতীয় তরমুজের আবাদ করবেন। উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ কাজ করে যাচ্ছেন। কীভাবে তরমুজের আবাদ উপজেলায় বেশি করে বৃদ্ধি করা যায় এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিস সব সময় প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে ও কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করবে।"
Comments