Image description

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর রং মিশিয়ে ভেজাল গুড় উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার শুকুরেরহাট শাপলা চত্বরে স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয়রা জানান, শুকুরেরহাট এলাকার আখতারুল মিয়া, নালু মিয়া, মোকলেছার ও মুকুল মিয়ার মালিকানাধীন মেসার্স মিল্লাত ট্রেডার্সসহ খামারপাড়ার কয়েকটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে গুড় উৎপাদন চলছে। এসব গুড়ে আখের রসের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও রং, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় এসব গুড়ে সিঁদুর বা শিল্পজাত রঙিন পদার্থ মেশানো হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, "ভেজাল গুড় শুধু মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে না, বরং আখচাষি ও প্রকৃত গুড় উৎপাদকদের বাজারও নষ্ট করছে। প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালালেও কিছুদিন পরই এসব কারখানা পুনরায় কার্যক্রম শুরু করে।"

বক্তারা আরও বলেন, "দেশে ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের কারণে প্রতিবছর লাখো মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন এবং অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগে। নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।"

এ সময় গোলাম মোস্তফা বুলু বলেন, "সব ধরনের খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য ভেজালমুক্ত রাখতে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ ও ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫’ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।"

মাজহারুল ইসলাম শাফিন বলেন, "দেশের প্রায় সব ভোগ্যপণ্যে এখন ভেজাল মিশে গেছে। অধিক লাভের আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা জনস্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছেন। সরকারকে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।"

রিপন আহমেদ বলেন, "রমজান মাসকে সামনে রেখে ভেজাল গুড় তৈরিতে ব্যস্ত এক শ্রেণির কারখানা মালিকরা দিনরাত কাজ করছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় শুকুরেরহাট পশ্চিম গেনারপাড়া ও ফুলচৌকি খামারপাড়ায় একাধিক কারখানা গড়ে উঠেছে।"

স্থানীয় কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, "প্রশাসন মাঝে মাঝে এসে জরিমানা করে চলে যায়, কিন্তু কয়েকদিন পরই তারা আবার গুড় তৈরি শুরু করে। আমরা চাই স্থায়ীভাবে এসব কারখানা বন্ধ করা হোক।"

প্রসঙ্গত, গত ৩১ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নেতৃত্বে পরিচালিত এক অভিযানে মিল্লাত ট্রেডার্স-এর মালিককে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩-এর ৩২ ধারা ও বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬(ক) ধারায় দুই লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, জরিমানা ও কারখানা সিলগালা করার পরও অবৈধভাবে গুড় উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ অব্যাহত রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে।

মানববন্ধনে এলাকাবাসী অবৈধ গুড় উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও স্থায়ীভাবে এসব কারখানা বন্ধের জন্য প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।