
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পুরানগ্রামে অবস্থিত ‘ডেরা রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা সেন্টা’র বছরের পর বছর ফায়ার সার্ভিসের নিয়ম ভঙ্গ করেও নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালে শর্তসাপেক্ষে ফায়ার লাইসেন্স পেলেও পরবর্তী দুই বছর প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্স নবায়ন করেনি। তবে ফায়ার সার্ভিস তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান বা জরিমানা করেনি; বরং তিন দফা নোটিশ পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে।
তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর, ১৯ নভেম্বর এবং ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে লাইসেন্স নবায়নের জন্য তিনটি পৃথক নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো নোটিশের পরও তারা লাইসেন্স নবায়ন করেনি। এরপরও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অথচ ২০২৫ সালের ৩০ জুন ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স না থাকায় শহরের শহীদ রফিক সড়কের পাশে অবস্থিত ধানসিঁড়ি হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল-মুনতাসির মামুন মনি ও ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর মন্টু বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে এ মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। একই দিনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ক্যাফে হাইওয়ে রেস্তোরাঁ অ্যান্ড চাইনিজকে লাইসেন্স নবায়ন না করায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন না করা বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযান চালানোর নজির পাওয়া যায়নি।
অবশেষে ২০২৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানটির পর্যটন লাইসেন্স বাতিল করলে ফায়ার সার্ভিস নড়েচড়ে বসে। দায় এড়াতে ২৫ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস কার্যালয় থেকে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে ডেরার ফায়ার লাইসেন্স বাতিলের আবেদন পাঠানো হয়।
এই ঘটনার আগে ও পরে ফায়ার সার্ভিসের কোনো তৎপরতা না থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে প্রভাবশালী মালিকানার কারণেই কি প্রতিষ্ঠানটি এতদিন আইনের বাইরে ছিল?
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হলে অগ্নি সুরক্ষা অনেকটা নিশ্চিত করা সম্ভব। ডেরা রিসোর্টের মতো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের নিষ্কিয়তা উদ্বেগজনক। প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া উচিত।
মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ডেরা রিসোর্ট শর্তভঙ্গ করে এসটিপি নির্মাণ না করায় এবং ছাড়পত্র নবায়ন না করায় প্রতিষ্ঠানটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অগ্নি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব সংস্থার সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার।
মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, অগ্নি সুরক্ষা সচেতনতা বাড়াতে আমরা নিয়মিত প্রচারণা চালাই। কেউ নিয়ম না মানলে ফায়ার সার্ভিস আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ফায়ার সার্ভিস অভিযান পরিচালনার জন্য আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করি। ডেরা রিসোর্টের ক্ষেত্রে তারা কোনো সহযোগিতা চায়নি; প্রয়োজন হলে নিয়ম অনুযায়ী সহযোগিতা করব।
Comments