
অভিনয় দিয়ে যাত্রা শুরু করা এক তরুণী এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, তার অশালীন নাচের কারণে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেফালী (২৫) একসময় কমেডি নাটকে অভিনয় করতেন। বর্তমানে তিনি ঢুকে পড়েছেন তথাকথিত “ডান্স মডেলিং”-এর জগতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেফালী ২০২১ সালের শেষের দিকে মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ শাজাহান ওরফে শুক্কুর আলীর সঙ্গে কমেডি নাটকে অভিনয় শুরু করেন। জুটি হিসেবে তারা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তবে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে শেফালীর সঙ্গে তাঁর অভিনয় দল সম্পর্ক ছিন্ন করে।
মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ দাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাজাহান ওরফে শুক্কুর আলী বলেন, “আমরা কমেডি নাটক করি মানুষকে হাসাতে ও সমাজে ইতিবাচক বার্তা দিতে। কিন্তু যখন দেখি তিনি অশালীন নাচে যুক্ত হচ্ছেন, তখনই আমরা তাকে আমাদের দল থেকে বাদ দিই।”
নাটক থেকে বাদ পড়ার পর শেফালী বর্তমানে মাধবপুর উপজেলার রতনপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি বিভিন্ন বাজার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ব্যক্তিগত আয়োজনে রাতের বেলা ‘ডান্স শো’-তে অংশ নিচ্ছেন। এসব অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত পোশাক ও অশোভন ভঙ্গিমায় নাচের অভিযোগ রয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
শেফালীর নোংরা নাচ এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হয়ে গেছে—ফেইসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ নেট দুনিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে।
শেফালীর বর্তমান স্বামী আদনান, নাসিরনগর উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেলেও তার বিস্তারিত ঠিকানা নিশ্চিত করা যায়নি। এর আগে শেফালী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের শ্রীঘর গ্রামের একজন ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন; তবে সে সংসার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
সচেতন মহলের উদ্বেগ:
স্থানীয় শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজকর্মীরা বলছেন, বিনোদনের নামে এ ধরনের প্রদর্শনী সমাজের সংস্কৃতি ও নৈতিকতা ধ্বংস করছে।
একজন প্রবীণ শিক্ষক মন্তব্য করেন, “এটা বিনোদন নয়, এটা সাংস্কৃতিক সন্ত্রাস। এখনই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি।”
ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের মতামত:
ফান্দাউক জামে মসজিদের খতিব বলেন, “নারীর মর্যাদা রক্ষা করা সমাজের দায়িত্ব। যে কোনো অশ্লীল প্রদর্শনী ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। এসব নোংরা নাচ সমাজের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের মননেও গভীর প্রভাব ফেলছে।”
নাসিরনগরের এক মাদ্রাসার শিক্ষক বলেন, “আজকের তথাকথিত ডান্স শো হচ্ছে শয়তানের হাতিয়ার। বিনোদনের নামে মানুষকে পাপের পথে টেনে নিচ্ছে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উচিত এগুলোর লাগাম টেনে ধরা।”
মাওলানা সাইফুল ইসলাম বলেন, “শালীন বিনোদন ইসলামে নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু অশালীনতা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজে যদি নৈতিকতা হারিয়ে যায়, শিক্ষিত প্রজন্মও বিপথে যাবে।”
ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের পীরজাদা আলহাজ্ব মুফতি সৈয়দ সালেহ আহমদ মামুন আল হোসাইন বলেন, “ধর্ম ও সংস্কৃতি আমাদের শালীনতা শেখায়। কিন্তু এখন বিনোদনের নামে যেসব কার্যক্রম চলছে, তা তরুণ সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। প্রশাসন ও সমাজের সব স্তরের মানুষকে আহ্বান জানাই—এ ধরনের অনৈতিক নাচ-গান বন্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”
প্রশাসনের নজরদারি ও স্থানীয় দাবী:
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ‘ডান্স মডেলিং’-এর আড়ালে চলছে অর্থের লেনদেন ও অনৈতিক কার্যকলাপ। তারা দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
শেফালীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্বামী আদনান মানবকন্ঠ প্রতিবেদককে বলেন, “শেফালী এখন এগুলো করে না। ডান্স মঞ্চের অনুষ্ঠান বাদ দেওয়া হয়েছে।”
সমাজ বলছে—সংস্কৃতি হোক পরিচ্ছন্ন, অশ্লীলতা নয়।
Comments