Image description

পটুয়াখালীর বাউফল পাবলিক মাঠে প্রেসক্লাবের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে এক বর্ণাঢ্য শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। এই মেলা শিল্প ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে আয়োজিত হচ্ছে, যা স্থানীয় জনমনে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। মেলায় শিশুদের বিনোদন থেকে শুরু করে নারী ক্রেতাদের জন্য আকর্ষণীয় পণ্যের সমাহার থাকবে, যা পাশ্ববর্তী উপজেলা থেকে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মেলায় শিশুদের জন্য থাকছে সার্কাস, ভুতের বাড়ি, নাগরদোলা, বেবি ট্রেন, ওয়াটার বোট, মোটরসাইকেল ও কার খেলার ব্যবস্থা। এছাড়া, সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাবে ব্লেজার, থ্রি-পিস, শো-পিস, জুয়েলারি, মুখরোচক খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য। বিশেষ করে ইমিটেশন গয়না, কসমেটিকস, শাড়ি, থ্রি-পিস ও জুতার স্টলগুলো নারী ক্রেতাদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। শতাধিক স্টলে থাকবে রঙ-বেরঙের গ্রামীণ ঐতিহ্যের পণ্য, যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে।

মেলা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকবে। পাশ্ববর্তী দুমকী, গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলা থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অভিভাবকরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই মেলায় অংশ নিতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেলাটি ২৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে। বাউফল প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. জলিলুর রহমানের স্বাক্ষরিত আবেদনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ম মেনে এই মেলার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। মেলার আয়োজন গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আয়োজকরা মনে করছেন।

তবে, মেলাকে কেন্দ্র করে একটি গোষ্ঠী বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা মিথ্যা ও গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে, যা জনস্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাউফল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন খান বলেন, “আমরা সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সম্মতিতে এই আয়োজন করছি। সরকারের নিয়ম মেনেই মেলা হচ্ছে, এতে শিক্ষার কোনো ক্ষতি হবে না। আমার নিজের সন্তানও পড়াশোনা করে।”

বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল জব্বার মৃধা ও পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান হাওলাদার বলেন, “সমাজের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে এই সংস্কৃতি ও শিল্পকে ধরে রাখা। নইলে এগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে।” একইভাবে, উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মো. ইছাহাক বলেন, “প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদের অবহিত করেছেন। সমাজ ও শিক্ষার্থীদের কোনো স্বার্থ অরক্ষিত রাখা যাবে না। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মেনে মেলা আয়োজন করা উচিত।” ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দও একই মত পোষণ করেছেন।

বরিশালের শিল্পী অমল বনিক বলেন, “সংস্কৃতি ও কুটির শিল্প এখন দুর্দিনে। এদের বাঁচিয়ে রাখতে মেলার মতো আয়োজন প্রয়োজন, যা সমাজকে অপরাধমুক্ত রাখে।” মৃৎশিল্পী বরুণ পাল বলেন, “তামা, কাঁসা, পিতলের জায়গা দখল করেছে স্টিল। মাটির পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় আমরা সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছি। গ্রামীণ মেলা না থাকায় আমাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। সরকারের এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।”

বাউফল প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. জলিলুর রহমান বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে বাউফল পাবলিক মাঠে শিশুদের বিনোদনের জন্য খোলামেলা পরিবেশে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি বিনোদনের মাধ্যমে মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে। আমরা আশা করছি, মনোরম ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে মেলা সফলভাবে সম্পন্ন হবে।”