
রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে ৯ জন রোগী শনাক্ত হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচজন রোগী অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে আসলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টিম রামনাথপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে গিয়ে আরও চারজনকে শনাক্ত করে। এ নিয়ে ওই ইউনিয়নে অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ বহনকারীর সংখ্যা দাঁড়াল ৯ জনে।
অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ বহনকারী ব্যক্তিরা হলেন দ্বারিয়াপুর গ্রামের আশুরা বেওয়া (৬৫), রবিউল ইসলাম (৫৫), শহীদ মিয়া (২৩), শরিফ মিয়া (২২), খাসা মিয়া (৫২), শিল্পী খাতুন (২৮), আল মামুন মিয়া (১৬), খোরশেদ আলী (২৫) এবং চেরাগপুর গ্রামের রওহাবুল মিয়া (৩২)।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ১১ অক্টোবর। দারিয়াপুর গ্রামের আশুরা বেগম তার মেয়ে মোরশেদা বেগমকে একটি গরু দান করেন। পরে গরুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে মোরশেদা বেগম উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। কিন্তু গরুটি সুস্থ না হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর মোরশেদা বেগম স্বামী টুটুলের পরামর্শ ও স্থানীয়দের সহায়তায় অসুস্থ গরুটি জবাই করেন। এই জবাইয়ের কাজে ১১ জন প্রতিবেশী সহায়তা করেন এবং গরুর মাংস ৫৫ জন আত্মীয়ের মাঝে বিতরণ করা হয়।
টুটুল মিয়ার ভাষ্যমতে, গরু জবাইয়ে তাকে সহায়তা করেন বিদ্যুৎ, রবিউল, শহীদ, আখিরুল, শাহ আলম, জাহিদুল, আশুরা বেগম, শিল্পী এবং শাহিনুর। এরপর দুই দিন পর, অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর, আশুরাসহ পাঁচজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। তারা মঙ্গলবার পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, "অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গের ৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। অ্যানথ্রাক্স ছোঁয়াচে রোগ নয়; এটি সাধারণত মানুষের থেকে মানুষের মধ্যে সহজে ছড়ায় না, তবে সংক্রামিত প্রাণীর সংস্পর্শে আসা বা এর মাংস খাওয়ার মাধ্যমে ছড়াতে পারে।"
পীরগঞ্জ উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ফজলুল কবীর বলেন, "পীরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষের অধিক গবাদি পশু রয়েছে। আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। অ্যানথ্রাক্স যেহেতু অসুস্থ গরু থেকে ছড়ায়, সেক্ষেত্রে অসুস্থ গরু ক্রয় এবং তা বিক্রি করা ঠেকাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এই মুহূর্তে প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।" তিনি পীরগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এবং অসুস্থ গরু-ছাগল দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন, যাতে দ্রুত নমুনা সংগ্রহ করে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ আছে কিনা নিশ্চিত করা যায়।
Comments